
এবং হিমু যখন প্র্যাকটিসিং মুসলমান (পর্ব-১০)
বিদেশিরা শুনেছি ঝিনুক খুব শখ করে খায় আর কোরিয়ানরা সাপ, তবে আমার বেলায় সামুদ্রিক সাপ হতে হবে,। আমি কখনও খেয়ে দেখিনি। হানাফি মাজহাব ছাড়া বাকি সব মাজহাবে বলা আছে সমুদ্রের নিচের সকল প্রাণীই হালাল। শুধু হানাফি মাজহাবে বলা আছে যে মাছের মত দেখতে হতে হবে তাহলেই খাওয়া যাবে। ঝিনুক বা সমুদ্রের নিচে বসবাস করা সাপ খাওয়া যাবে কি না এটা নিয়ে শুনেছি আলেমদের মধ্যে ইখতিলাফ আছে।
বাবুর্চি হতভম্ব গলায় বলল, স্যারের কথা বুঝতে পারলাম না। কিসের স্যুপ?
আচ্ছা সাপ বাদ দিন , ঝিনুকের স্যুপ । ঝিনুকের খোলস ফেলে দিয়ে ভেতরের নরম অংশটা দিয়ে স্যুপ তৈরি করতে হবে। সাথে মাশরুমও দীতে পারেন। বেবি কর্ন দিবেন। সয়াসস অল্প দেবেন। ঝিনুকের গন্ধটা মারার জন্য যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু । বেশিও না কমও না।
আমি স্যার আসলেই আপনার কথা বুঝতে পারছি না।
বুঝতে না পারলে বিদায় হয়ে যান।
জি আচ্ছা স্যার ।
তালাবদ্ধ বাড়িতে পড়ে আছি। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি কাজ করতে শুরু করেছে। সময় থেমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। টাইম ডাইলেশন। তালাবদ্ধ অবস্থায় যে এর আগে থাকিনি তা না ।টেররিস্ট সন্দেহে হাজতে কাটানো রাতের সংখ্যা কম না । তবে হাজত তালাবদ্ধ থাকবে এটাই স্বীকৃত সত্য বলে খারাপ লাগে না। তালা খোলা অবস্থায় হাজতে বসে থাকাটা বরং অস্বস্তিকর। কিন্তু এই আলিশান বাড়িতে তালাবদ্ধ অসহনীয় ।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি বেহেশতো কেমন হবে? কোন তালার ব্যবহার কি সেখানে থাকবে। আল্লাহ যদি জান্নাত নসিব করেন । তাহলে নিজের ঘর থেকে বেড় হয়ে যখন ঘুরতে যাব তখন কি সদর দরজায় তালা দিয়ে যাব? নাকি খোলা রেখেই যেতে হবে। তখন কি আদৌ ঘরের সদর দরজা বলে কিছু থাকবে। অন্য ডাইমেনশোনের কোন কিছু এখানে বসে ভেবে চিন্তে বেড় করা সম্ভব না। যতটুকু আল্লাহ মানুষকে বোঝানোর জন্যে বলে দিয়েছেন সেটা দিয়ে একটা ধারনা নেয়া যেতে পারে। আর ঐ টুকুতেই এখন সন্তুষ্ট থাকতে হবে। জান্নাতে না গিয়ে জান্নাতকে বুঝে ফেলা অসম্ভব। খালার নামাজ ঘরে প্রচুর বই দেখলাম, এই বাসায় যতদিন আছি এর মধ্যে সুরা বাকারা মুখস্ত করার পাশা পাশি জান্নাত নিয়ে ভালো করে আরও কিছু তথ্য জোগাড় করে নিতে হবে। আরও ভালো করে পড়ে ফেলতে হবে। জান্নাতে নাকি হাটের মতো একটি জায়গা থাকবে সেখান থেকে ঘুরে আসলে মানুষ আরও সুন্দর হয়ে যাবে।
কফি খাচ্ছি , কফিতে কোন স্বাদ পাচ্ছি না। স্বাদ যেমন নেই , গন্ধও নেই । একটু পর পর চোখ চলে যাচ্ছে ঘড়ির দিকে। ঘড়ি মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে গেছে।
আমার বিখ্যাত বাবা আমাকে বন্দি থাকার ট্রেনিং অতি শৈশবে দিয়েছিলেন । তার কাছে মনে হয়েছিল। মহাপুরুষ বানানোর জন্যে এই ট্রেনিং খুবই জরুরি। বন্দি না থাকলে মুক্তির সরূপ বোঝা যায় না। বাবার জন্য আমার কষ্ট হয়। আমার বাবা আমাকে মহা পুরুষ বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি আমাকে নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন । তিনি আস্তিক ছিলেন, অথচ একবারও ঠিক ভাবে ইসলামকে বুঝতে চেষ্টা করেন নি। বাবা যদি পরিপূর্ন ইমান নিয়ে মারা যেতেন তাহলে ভালো লাগতো। বাবার জন্যে যখন আমার কষ্ট হয়। তখন আমি আমাদের নবিজি (সা) এর কথা ভাবি । ওনাব বাবাও ইমান নিয়ে মরতে পারেন নি। নবী হওয়া সত্যেও তিনি তার বাবা কে জান্নাতে পাবেন না। নবিজি(সা) র এই কষ্টের কাছে আমার মত তুচ্ছ হিমুর কষ্ট তো কিছুই না।
একদিনের কথা। বাবা আমাকে ঘরে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দিলেন। — তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। যতটা অবাক হওয়ার কথা ততটা হলাম না। বাবার পাগলামির সঙ্গে ততদিনে পরিচিত হয়ে পড়েছি। আমার ধারনা সন্ধ্যা নাগাদ তালা খোলা হবে। আতংকে অস্থির হয়ে লক্ষ্য করলাম সন্ধ্যার পর পর বাবা বাড়ি ছেড়েই চলে গেলেন। যাবার সময় মেইন সুইচ অফ করে দিলেন। একেবারে কবরের অন্ধকার। এইটা ছিল আমার বাবার ভয় জয় করা ট্রেনিং এর প্রাথমিক অংশ। তার ডায়েরীতে তিনি লিখেছিলেন–
অদ্য রজনীতে হিমালয়কে ভয় জয় করিবার প্রস্তুতিসূচক ট্রেনিং দেওয়া হইবে। মানুষের প্রধান ভয় অন্ধকারকে। যে অন্ধকারের স্মৃতি সে অন্য কোন ভুবন হইতে লইয়া আসিয়াছে। অন্ধকারকে জয় করার অর্থ সমস্ত ভয় জয় করা। অন্ধকার জয় করা বিষয়ক প্রাথমিক ট্রেনিং হিমালয় কিভাবে গ্রহণ করিবে বুঝিতে পারিতেছি না। এই শক গ্রহণ করিবার মানসিক শক্তি কি তাহার আছে? বুঝিতে পারিতেছি না। কাহাকেও বাহির হইতে দেখিয়া তাহার মানসিক শক্তি সম্পর্কে ধারনা করা যায় না । সেই দিব্য দৃষ্টি স্রষ্ঠা মানব সম্প্রদায়কে দ্যায় নাই…
আমি ইন্টারকম টিপে বাবুর্চিকে ডাকলাম । ইন্টারভিয়ু নেয়ার ভঙ্গিতে বললাম, কি নাম?
ইদ্রিস।
শুরুতে তাকে আপনি করে বলেছিলাম, এখন তুমি ।
শোন ইদ্রিস নামায পড়া হয়।
জ্বি স্যার ।
কোথায় পড় নামায ঘরে ?
জ্বিনা স্যার ওখানে শুধু ক্লিনারের এক্সেস আছে আমাদের এমনিতে ঐ ঘরে ঢোকা নিষেধ।
তাই নাকি
জ্বি ।
আজকে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা উইড্রো করা হল। নামাযের ঘরে ঢোকার নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে না।
জ্বি স্যার ।
শোন যোহরের নামায একসাথে জামাতে পড়ব, মালী আরও একজন বাবুর্চি আছে না ।
জ্বি স্যার ।
ওরা কি সবাই মুসলমান?
সবাই মুসলমান স্যার ।
ওদেরকে নিয়ে আসবা একসাথে জামাতে নামায আদায় করা হবে। আর আজকে বসে জান্নাত কেমন এই সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করব ঠিক আছে!
ম্যাডাম রাগ করবে স্যার।
রাগ করবে না সেই ব্যপার তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও। — আচ্ছা ইদ্রিস , এ বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা আছে? বাথরুম থেকে পাইপ বেয়ে নেমে পড়া বা এ জাতীয় কিছু?
জ্বি না।
ছাদে উঠে, ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়ে যাওয়া যায় না।?
জ্বি — না।
টেলিফোন নিয়ে আস। দমকল অফিসে টেলিফোন করে দি। ওরা তালা খুলে উদ্ধার করবে।
টেলিফোন নেই স্যার
টেলিফোন নাই মানে?
এই বাড়িতে সব আছে টেলিফোন নাই। টেলিফোনে লোকজন বিরক্ত করে, ম্যাডামের ভাল লাগে না।
ও আচ্ছা ।
স্যার আরেক কাপ কফি এনে দেই, চিন্তার কিছু নেই ম্যাডাম চলে আসবেন। উনি বেশিক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকেন না । চলে আসেন । কফি দিব স্যার?
দাও।
বাবুর্চি কফি এনে দিল। আমি কফি খেয়ে বাবুর্চি মালিকে নিয়ে সময় কাটালাম , নামাজের ঘরে জামাতে নামাজ আদায় করলাম । জান্নাত এ কি কি থাকবে তাই নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললাম।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল এখনই জান্নাতে ঝাপ দিয়ে পড়তে চাচ্ছে সবাই। মানুষ বড় অদ্ভুত জীব নগদ জান্নাত চায় ঠিকই, কিন্তু জান্নাতের জন্য কষ্ট করতে চায় না।
আমি মাগরিবের নামাযের পর বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম , খালা এখনও ফেরেন নি । তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। সেই ঘুম যখন ভাঙল তখন দেখি রাত হয়ে গেছে। ঘর অন্ধকার।
কিরে ঘুম ভেঙ্গেছে?
রেশমা খালা ঢুকে বাতি জ্বালালেন । মাথায় বিশাল কাপড় টানা । যে কেউ দেখলে মনে করবেন পর্দা করতেই মাথায় কাপড় দীয়ে রেখেছেন । কিন্তু ব্যপারটা অন্য । খালার চুল পড়ে যাচ্ছে। আগে পট চুল পরে ঘুরতেন , পট চুলে এলার্জি হয় দেখে ইদানীং আর পট চুল পরে ঘুরেন না । হিজাব করে ঘুরেন। হিজাব ছাড়া খালাকে বীভৎস লাগে। এক এক জায়গা চুল উঠে যাওয়ায় ব্যপারটা একটু বেশি বিতঘুটে হয়ে গেছে।
ঘরে ফিরে দেখি তুই মরার মত ঘুমাচ্ছিস । তাই আর ঘুম ভাঙ্গালাম না। ঘুমের মূল্য কি তা আর কেউ না জানুক আমি তো জানি। এতক্ষণ ধরে কেউ ঘুমুতে পারে তাও জানতাম না। তোর কোন অসুখ বিসুখ নেই তো ?
কটা বাজে খালা?
সাড়ে দশটার কাছা কাছি। তুই অনেকক্ষণ ঘুমুলি । খিধে লেগেছে নিশ্চই ? হাত মুখ ধুয়ে আয় ভাত খাই।
আমি উঠলাম । শান্ত গলায় বললাম , খালা নামাজের ঘরটায় আজকে তোমার অনুমতি ছাড়া সবাই কে নিয়ে নামায পড়েছি।
সবাইকে নিয়ে মানে?
মানে তোমার বাবুর্চি, মালী , ওদেরকে নিয়ে নামায পড়েছি। তোমার বাংলা বাবুর্চির তেলাওয়াত খুবই সুন্দর । তুমি যে রেকর্ডারটা বাজাও ওনার অবিকল। কোন একদিন শুনে দেখ। আর শোন খালা নামাজের ঘর যখন বানিয়েছ এখানে নামাজ পড়তেও দিতে হবে।
হু বুঝলাম। ঠিক আছে । ওরা যে নামাজ কালাম পরে সেটা তো আমি জানতামই না । দামি দামি অনেক কিছু আছে ঘরে যদি নামাযের কথা বলে চুরি ধারি করে । এই জন্যে ওদেরকে আমার অনুপস্থিতি তে ঢুকতে মানা করেছিলাম , তুই যখন বলছিস আজকে থেকে আর ওদের মানা নেই। মানা উইড্রো করা হল ।
থ্যাংক ইউ খালা ।
আয় খেয়ে নেই।
খেয়ে দেয়ে আমি একটু বের হব।
বেড় হতে চাইলে বের হবি । আমি কি তোকে আটকে রেখেছি নাকি? বাবুর্চি বলছিল তালা দিয়ে যাওয়ায় তুই নাকি অস্থির হয়ে পরেছিলি। আশ্চর্য। তুই কি ছেলেমানুষ নাকি ? তুই আবার তাকে বলেছিস সাপ না হলে ঝিনুকের সুপ খেতে চাস। বাবুর্চিটা বোকা টাইপের ও তোর কথাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে । ঠাট্টা বুঝতে পারে নি।
ঝিনুকের স্যুপ তৈরি করেছে? আমি ঠাট্টা করিনি আসলেই খেতে চেয়েছিলাম ।
তুই দেখি আচ্ছা পাগল। হারাম জিনিস খাবি নাকি।
হারাম না তো খালা ।
খালা কিছু বললেন না শান্ত গলায় বললেন
আয় খেতে আয়। খেতে খেতে আমার ভয়ংকর গল্পটা বলব । তুই আবার চারদিকে বলে বেড়াবি না।
ডাইনিং রূম ছাড়াও ছোট্ট একটা খাবার জায়গা আছে। শ্বেত পাথরের টেবিলে দুটা মাত্র চেয়ার। মোমবাতি জ্বালিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা। টেবিলে নানান ধরনের পদ সাজানো।
বাবুর্চি পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। খালা বললেন, তুমি চলে যাও , তোমাকে আর লাগবে না । খাওয়া শেষ হলে ঘণ্টা বাজাব তখন সব পরিষ্কার করবে।
ঘণ্টারও ব্যবস্থা আছে?
আছে সব ব্যবস্থাই আছে। খাওয়া শুরু কর। বাবুর্চির রান্না কেমন বলবি। রান্না পছন্দ না হলে ব্যাটাকে বিদায় করে দেব। ব্যাটার চোখের চাউনি ভাল না। স্যুপটা কেমন?
ভাল। খুব ভাল আলহামদুলিল্লাহ ।
তুই তো এখনও মুখেই দিস নি । মুখে না নিয়েই বলে ফেললি ভাল?
গন্ধে গন্ধে বলে ফেলেছি। চায়নিজ খাবারের আসল স্বাদ গন্ধে। গন্ধ ঠিক আছে। বাবুর্চি রেখে দাও।
চোখের চাউনিটা যে খারাপ। মাঝে মাঝে ভয়ংকর করে তাকায়।
ওকে বলবে সবসময় যেন সানগ্লাস পরে থাকে।
বুদ্ধিটা খারাপ না । ভাল বলেছিস হিমু। এটা আমার মাথায় আসে নি। কথায় আছে না এক মাথা থেকে দুই মাথা ভাল। আসলেই তাই।
হু। আরেকটা সলিউশন আছে , পুরোপুরি পর্দা করা শুরু করে দাও । এদের সামনে আসতে হলে একদম কালো বোরখা পরে আসবে। খাওয়ার সময় এদের কাউকে সামনে রাখবে না … এরা সামনে থাকলে তুমি সান গ্লাস পরে থাকবে।
এইটা আমি পারবো না। বোরখায় গরম লাগে অনেক ।
জাহান্নামের আগুণ তো এই গরমের চেয়েও অনেক বেশি গরম খালা।
হয়েছে আপনাকে আর জাহান্নামের ভয় দেখাতে হবে না। এখন আমার সমস্যাটা শোন। খুব মন দিয়ে শুনবি।
খাওয়া শেষ হোক তারপর শুনি…
খেতে খেতেই শোন। আমি আবার চুপ চাপ খেতে পারি না। ব্যপারটা কি হয়েছে শোন। তোর খালু মারা যাবার পর বাড়ি ভর্তি হয়ে গেল ফালতু লোকে। ওমুক আত্মীয় তমুক আত্মীয়। এক্কেবারে খুটি গেড়ে বসেছে। মতলব আর কিছু না, টাকা পয়সা হাতানো। টাটকা মধু পড়ে আছে — পিঁপড়ার দল চারদিক থেকে এসে পড়েছে। আমি একে একে ঝেটিয়ে সব বিদেয় করলাম। বাড়ি খালি করে ফেললাম। চব্বিশ ঘণ্টা গেঁটে তালার ব্যবস্থা করলাম। একজনের জায়গায় দুজন দারোয়ান রাখলাম। চব্বিশ ঘণ্টা ডিউটি। কাউকে ঢুকতে দেবে না। কেউ যদি ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি নট। আমার যদি কারোর সঙ্গে কথা বলা দরকার হয় আমি নিজেই দেখা করতে যাব। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। লোকজন টেলিফোনে বিরক্ত করে। দিলাম টেলিফোন লাইন কেটে।
এত বড় বাড়িতে আমি থাকি একা। একটু যে ভয় ভয় লাগে না , তা না। লাগে কিন্তু আত্মীয় স্বজনের যন্ত্রণার চেয়ে ভয় পাওয়া ভাল। লক্ষ গুন ভাল।
তারপর একদিন কি হয়েছে শোন। রাত এগারোটার মত বাজে। খুব দেখি মশা কামড়াচ্ছে। দরজায় জানালায় নেট আছে তারপরেও এত মশা ঢুকল কি ভাবে?
আমার মেজাজ হয়েছে খারাপ। কারণ আমি আবার মশারির ভেতর ঘুমাতে পারি না। আমার একটা কাজের মেয়ে ছিল বোবা । ওকে বললাম মশারি খাঁটিয়ে দিতে। ও মশারি খাঁটিয়ে দিলো। মেজাজ টেজাজ খারাপ করে ঘুমুতে গেছি। বাতি নিভিয়ে মশারির কাছে গেলাম , মশারি তুলে দেখি মশারির ভেতর তোর খালু সাহেব বসে আছে। গুটি সুটি মেরে বসা। মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।
আমি চিৎকার দীয়ে অজ্ঞান। সেই থেকে শুরু। কখনো তাকে দেখি খাটের নিচে । কখনো বাথরুমের বাথটাবে। একদিন পেলাম ডীপ ফ্রিজে।
কোথায়? ডীপ ফ্রিজে?
হ্যাঁ । ডীপ ফ্রিজ সবসময় বাবুর্চি খোলে সেদিন ফ্রিজে জিনিসপত্র কি আছে দেখার জন্যে ডালাটা তুললাম – দেখি একেবারে খালি ফ্রীজ । সেখানে ও বসে ঠাণ্ডায় থর থর করে কাঁপছে । এই হল ব্যপার বুঝলি। এরপর থেকে রাতে ঘুমুতে পারি না।
রোজই দেখ ?
প্রায় রোজই দেখি।
আজ দেখেছ ?
এখনো দেখিনি। তবে দেখব তো বটেই। এর মানেটা কি বল তো হিমু? এই অত্যাচারের কারণ কি? ভুত প্রেত বলে সত্যি কি কিছু আছে? মানুষ মরলে ভুত হয়?
আমি দেখলাম রেশমা খালা আর কিছু খেতে পারছে না । মুখ শুকিয়ে গেছে।
হাত কাঁপছে। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, হিমু কথা বলছিস না কেন?
তুমি একাই ওনাকে দেখ না আরও অনেকেই দেখে?
সবাই দেখে। বোবা মেয়েটা দেখেছিল । দেখে চাকরি টকরি ছেড়ে চলে গেছে। আমার সাথে যারা আছে তাড়াও দেখেছে মনে হয়। এরা কেউ রাতে দোতলায় ওঠে না। তুই রাতটা আমার সঙ্গে থাক তুইও দেখবি ।
আমি খালার দিকে তাকিয়ে রইলাম এই প্রথম বেচারির জন্যে মায়া লাগছে ।
(চলবে ইন শা আল্লাহ … )
আগের পর্বগুলোর লিংক