
সিগারেট খাওয়ার শারঈ হুকুম কি? সিগারেট খাওয়া কি মাকরূহ নাকি হারাম?
উত্তর: সিগারেট খাওয়া হারাম।
যে সমস্ত হুজুররা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয় তাদের সিগারেট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। সিগারেটের ক্ষতির পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারনা নেই তাই তারা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয়। এতে দোষটা আসলে তাদের পুরোপুরি না। কেননা কুরআন ও হাদিসে সিগারেট সম্পর্কে কোন কথা বলা হয় নি।
যে সমস্ত হুজুররা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয় তাদের এই ফতোয়ার অন্যতম কারন ঐ সমস্ত বিদআতি হুজুররা অধিকাংশই পান (জর্দা) খোর। তারা যদি সিগারেটকে হারাম বলে ফতোয়া দেয় তবে সাধারণ মানুষ বুঝে ফেলবে এবং জিজ্ঞাসা করবে- আপনি যে জর্দা দিয়ে পান খাচ্ছেন সেটাও তামাক আর আমি যে সিগারেট খাচ্ছি সেটাও তামাক, আপনি হুজুর বিধায় আপনারটা জায়েজ হলে গেল আর আমারটা হারাম হয়ে গেল।
তাই ঐ সমস্ত বিদআতি হুজুররা সিগারেট খাওয়াকে “মাকরূহ” বলে ফতোয়া দেয়। তবে বিনা জর্দাতে যদি কেউ পান খায় তবে সেটা হালাল হবে।
পান এবং সিগারেট খাওয়া এমন একটি বদ অভ্যাস যা নিজের ক্ষতির পাশাপাশি অন্যের ক্ষতি করে থাকে। সিগারেটের বর্জনকৃত ধোঁয়া অন্য মানুষের নাকে দিয়ে তাঁর ফুসফুসে প্রবেশ করে ফলে সেই লোকটির ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারো কি কোন অধিকার আছে অন্যের ক্ষতি করা? যারা পান খায় তাদের মুখের জর্দার গন্ধে অন্য মানুষের তাদের সাথে কথা বলতে কষ্ট হয়। তাদের পানের পিক অনেক সময় অন্যের জামা-কাপড় নষ্ট করে, তারা সুন্দর পরিবেশকেও পানের পিক দ্বারা নষ্ট করে। আর বিনা কারনে অন্যকে কষ্ট দেয়া ও ক্ষতি করা একটি মারাত্মক কাবিরা গোনাহ।
মহান আল্লাহ্ বলেন- “যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। (সুরা আল আহযাবঃ ৫৮)
বস্তুত জর্দা-সিগারেট খাওয়াই হারাম।
তার দলীল-
মহান আল্লাহ্ বলেন- “তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা আরাফ : ১৫৭)
এবার আপনিই বলুন সিগারেট কি পবিত্র বস্তু নাকি অপবিত্র বস্তু?
আর সিগারেটের মত খাদ্যের প্রভাব যে কত টা করুণ তা আমাদের সকলেরই জানা। তাই এমন একটি নিকৃষ্ট খাদ্য কি করে জায়েজ হতে পারে?
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। (সুরা বাকারাঃ ১৯৫)
মহান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।” (সুরা নিসাঃ ২৯)
আমরা সবাই জানি আত্মহত্যা করা মহাপাপ।
অথচ এটাও আমরা সবাই জানি যে, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে- “ধূমপান মৃত্যু ঘটায়।/ ধূমপানের কারনে স্ট্রোক হয় ইত্যাদি।
সিগারেটের মূল উপাদান হচ্ছে- তামাক। তামাক একটি খুবই ঘাতক বস্তু। এই তামাক মানুষের শরীরে কান্সার হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর তামাকের ধোঁয়াতে নিকোটিন ছাড়াও আরো প্রায় চার হাজার রকমের রসায়নিক দ্রব্য থাকে। এইগুলি উৎপন্ন হয় তামাকের পোড়ার জন্য, তাছাড়া সিগারেট তৈরীর সময় তামাক পাতায় নানারকমের কেমিক্যাল বা রসায়নিক দ্রব্য মেশান হয়, সেইসব কেমিক্যালের পোড়ার সময় নানা প্রতিক্রিয়ার জন্য হাজার রকমের রসায়নিক দ্রব্য তৈরী হয়।
যেটা সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে সেটা হ’ল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনিকা যেগুলি বায়বীয় বা গ্যাসের আকারে বেরিয়ে আসে। এ ছাড়া কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ও টার (অনেকটা আলকাতরার মত) রসায়নিক জিনিষও বেরিয়ে আসে সেটাও মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক।
গবেষণায় জানা গেছে ধূমপানের কারনে হয়,
১. ফুসফুসে ক্যান্সার, কিডনীতে ক্যান্সার, ব্ল্যাড ক্যান্সার ইত্যাদি।
২. হাই ব্লাড প্রেশার
৩. অ্যাজমা
৪. ইম্পাইসেমা
৫. ব্রঙ্কাইটিস
৬. ব্রেন ষ্ট্রোক ইত্যাদি এমন আরো মারাত্মক রোগ হয়।
তাই এমন মরন ঘাতী একটা বস্তু কি করে হালাল হতে পারে?
অতএব একথা এখন প্রমানিত যে- তামাক, জর্দা, বিড়ি, সিগারেট, গুল ইত্যাদি খাওয়া হারাম।
“সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল”। (সুরা ইসরাঃ ৮১)
রেফারেন্স সহ পাবেন সিগারেট খাওয়া কি হারাম নাকি মাকরূহ?এইখানে।
Nice