
শিশু শিক্ষা
শিশুর আচরণ দেখে তার মায়ের কথা মনে পড়ে। জানতে ইচ্ছে হয় এ শিশু কোন মায়ের সন্তান ? কোন পরিবারের সন্তান ? স্নেহময়ী মায়ের নিঃশব্দ গম্ভীর কালোমুখ শিশুর কাছে শিক্ষকের বেতের আঘাত থেকেও অনেক বেশী ভীতিপ্রদ।
শিশু হলো কাঁচা সোনা। তাকে দামী অলঙ্কারে উন্নীত করতে হবে। সোনা কঁচা থাকতেই তাতে মূল্যবান অলঙ্কারে রূপান্তরিত করতে হবে। অলঙ্কার পছন্দ না হলে তা ভেঙ্গে নতুন করে গড়া যায়।
মাতা-পিতার পছন্দহীন মন-মানসিকতা নিয়ে শিশু গড়ে উঠলে তাকে ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করা যাবেনা। পিটিয়েও সোজা করা যাবেনা।
শিশুর মন যখন কোমল ও নরম থাকে, তখনই তা গভীর মনোযোগ দিয়ে সোজা করে নিতে হয়। মাতা-পিতাকে প্রতিটি মুহূর্তে তাদের শিশুটি স্মরণে থাকা উচিত। মন নরম থাকাকালে সকল গুণাবলীর অঙ্কুর তার মনে বপন করতে হবে।
ছেলেকে যদি ছেলের মত গড়ে তোলা না হয়, যদি তাকে কষ্ট করতে না শিখান হয়, সে মেয়েলী স্বভাবের ন্যায় গড়ে উঠবে। তার মধ্যে মেয়েদের সকল দুর্বলতা প্রস্ফুটিত হবে। কিন্তু মেয়েদের কোন গুণাবলী দেখা যাবেনা।
খেলা
খেলনা, ঠোঙ্গা নিয়ে খেলা হতে কেরাম খেলার দিকে টেনে নিতে হবে। টেনিস রেকেট, ব্যাডমন্টন রেকেট, ফুটবল, ক্রিকেট বল ইত্যাদি দেয়া হলে সেগুলির দিকে মন যাবে। হাড়ি পাতিল নিয়ে খেলতে আর মন চাইবেনা।
নির্দেশ মানা
শিশুর প্রথম শিক্ষা হবে নির্দেশ মান্য করার শিক্ষা।
ভাইকে কমলা দাও। আপাকে চকলেট দাও। যদি না দিতে চায় তবে আরো একটা বড় হাতে রেখে বলতে হবে, কমলা ওটা ভাইয়াকে দাও, তা হলে এটা তোমাকে দেব। ভাইয়াকে দিয়ে আস- তারপর এ কমলা নিয়ে যাও।
খেলনা নিয়ে যাও। আমাকে বই দাও। আমি খেলনা দিব।
আব্বাকে বিসকিট দাও। টুপি দাও। আমি কমলা দেব। দাদাকে চুমো দাও। তোমাকে আপেল দেব। কোন কিছু দেবার আগেই একটি হুকুম মান্য করাতে হবে।
শিশুরা ক্লান্ত হয়না। তাদেরকে হুকুম মানাতে অভ্যস্থ করতে হবে।
শিশুকে কোন কিছু গিয়ে দিতে নেই, ডেকে দিতে হবে। ফলে জিনিসটিও দেয়া হলো, সাথে সাথে একটি হুকুম মানার অভ্যস্থ করা হলো।
শিশু অনেক কিছু চায়। কোন কিছু চাইলেই তার কাছে কিছু চাইতে হবে। একটা হুকুম মানাতে হবে।
আম্মা! বিস্কুট দাও। শুনে আম্মা বলবেন তুমি অনেক কিছু ধরেছ। ময়লা লেগেছে। ময়লা থাকলে দেখাতে হবে। বলতে হবে বাথরুমে হাত ধুয়ে আস।
যদি না যেতে চায়, সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। নিজে আগে হাত ধুতে হবে। তাকে হাত ধোয়ার জন্যে, কুলি করার জন্যে, দাঁত মাজার জন্যে বলতে হবে। তারপর তার প্রার্থীত বস্তুটি দিতে হবে।
সেনাবাহিনীতে left, right, attention, stand at ease এতো বেশী করা হয় যে attention শব্দ শুনলে পা দু’টি একত্র হয়ে যায়। বাড়ীতেও শিশুকে তেমন ভাবে হুকুম পালনে অভ্যস্থ করে নিতে হবে।
শিশুরা বয়স্কদের কোল ভালোবাসে। কোলে উঠতে চাইলেই বলতে হবে, তোমার গাড়ীটি নিয়ে এসো, বলটি নিয়ে এসো। শিশুরা তাদের জিনিষ দেখাতে এবং তা নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসে। মূলকথা হলো – শিশুকে আদেশ পালনে অভ্যস্থ করতে হবে। মা-বাবা বা বড়দের কথা শুনা অর্থাৎ মানা যেন তার স্বভাবে পরিণত হয়।
আমরা শিশুকে শিক্ষা দিতে চাই। কিন্তু তাদের থেকে কোন শিক্ষা নিতে চাইনা। দুনিয়াটা হলো দেয়া নেয়ার জায়গা। শিশু হতে কিছু নেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে শিশুকে অনেক কিছু দিতে পারবো।
শিশুকালের অভ্যাস এবং স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনব্যাপী স্থায়ী হয়। ছোট বেলার অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন হয়না শিশু স্মৃতিও অনেক ক্ষেত্রে মুছে ফেলা যায়না।
সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম