বিষয়ঃ আত্মসমালোচনা !
আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হচ্ছে- নিজের করণীয় এবং বর্জনীয় পৃথক করে ফেলা। অতঃপর সর্বদা ফরয ও নফল কতর্ব্যসমূহ আদায়ের জন্য প্রস্ত্তত থাকা এবং হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার উপর সুদৃঢ় থাকা। তিনি আরো বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হ’ল প্রতিটি কাজে সর্বপ্রথম আল্লাহর হক্ব সমূহের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া; অতঃপর সে হক্বগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হচ্ছে কি-না সেদিকে লক্ষ্য রাখা (আল-ফাওয়ায়েদ)।
মুহাসাবাতুন নাফস’ বা আত্মসমালোচনাকে প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلاَ تَكُونُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামী কালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক’ (হাশর ১৮)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক মুমিনের জন্য আত্মসমালোচনাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলছেন, তোমাদের অবশ্যই চিন্তা করা কর্তব্য যে, আগামী দিনের জন্য তুমি যা প্রেরণ করেছ তা তোমার জান্নাতের পথ সুগম করছে, না-কি তোমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? [ ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত: দারুল কিতাব আল- আরাবিইয়াহ, ৩য় প্রকাশ, ১৯৯৬), ১/১৮৭ পৃঃ।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আত্মসমালোচনাকারীদের প্রসংশা করে বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَواْ إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ-
‘যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে’ (আ‘রাফ ৭/২০১)।
আত্মসমালোচনার গুরুত্ব সম্পর্কে ওমর (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, حَاسِبُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوْا، وَزِنُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُوْزِنُوْا. فَإِنَّّهُ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ فِيْ الْحِسَابِ غَدًا، أَنْ تُحَاسَبُوْا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ، وَتَزَيَّنُوْا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ কর, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হবার পূর্বেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ করার পূর্বেই। কেননা আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামীদিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদেরকে সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সেদিন গোপন থাকবে না’।{ তিরমিযী হা/২৪৫৯}