ডাকাতদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদেরকে হত্যা করার বিধান
ডাকাতদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদেরকে হত্যা করার বিধান ফতোয়া-১:
প্রশ্ন: যদি আমি কোথাও সফর করি এবং সেখানে শত্রুদের দেখি, যারা পথ অবরোধ করে সম্পদ লুণ্ঠন করছে, আমি কি তাদেরকে আমার সম্পদ দিয়ে দেব, নাকি তাদের সাথে লড়াই করব? আর যদি আমি তাদের হ***ত্যা করি বা তারা আমাকে হ**ত্যা করে তাহলে ইসলামের বিধান কী?
উত্তর:
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল:
يا رسول الله، يأتيني الرجل يريد مالي؟ قال: لا تعطه مالك، قال: فإن قاتلني؟ قال: قاتله. قال: فإن قتلته؟ قال: فهو في النار. قال: فإن قتلني؟ قال: فأنت شهيد
“হে আল্লাহর রসুল, যদি কোনও ব্যক্তি আমার সম্পদ নেওয়ার জন্য আসে?”
তিনি বললেন: “তাকে তোমার সম্পদ দিও না।”
লোকটি বলল: “যদি সে আমার সাথে লড়াই করে?”
তিনি বললেন: “তুমিও তার সাথে লড়াই করো।”
লোকটি বলল: “যদি আমি তাকে হত্যা করি?”
তিনি বললেন: “সে জাহান্নামে যাবে।” লোকটি বলল: “যদি সে আমাকে হত্যা করে?”
তিনি বললেন: “তুমি শাহিদ হবে।” [মুসলিম, সহিহ]
সুতরাং তোমার এখতিয়ার আছে। যদি লড়াই ছাড়া তাকে প্রতিহত করা সম্ভব না হয় তাহলে তুমিও তার সাথে লড়াই করতে পারো। কিন্তু তাকে তোমার সম্পদ দেবে না।
তবে যদি তুমি তোমার প্রাণ বাঁচানোর জন্য তোমার সম্পদের কিছু অংশ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে চাও তাহলেও কোনও সমস্যা নেই। কারণ প্রাণ সম্পদের চেয়ে মূল্যবান।
কিন্তু যদি তুমি লড়াই করো তাহলেও কোনও সমস্যা নেই।
আর যদি তুমি তাকে হত্যা করো তাহলে সে জাহান্নামে যাবে (আল্লাহর আশ্রয় চাই) এবং তার রক্ত বৃথা যাবে [অর্থাৎ এর জন্য তোমার উপরে কিসাস (হত্যার বদলে হত্যার বিধান) বাস্তবায়িত হবে না]।
আর যদি সে তোমাকে হত্যা করে তাহলে তুমি শাহিদ হবে। কারণ তুমি অত্যাচারিত হয়েছো।
যদি তুমি তোমার সম্পদের কিছু অংশ দিয়ে তাকে শান্ত করতে পারো এবং পরে কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিষয়ে অভিযোগ করো তাহলেও কোনও সমস্যা নেই।
অর্থাৎ তোমাকে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়নি। যদি তুমি লড়াই করো তাহলে কোনও সমস্যা নেই। আর যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও এবং তার খারাপ ইচ্ছা মেটানোর জন্য তাকে কিছু দিয়ে নিজের প্রাণ ও রক্ত বাঁচাও তাহলেও কোনও সমস্যা নেই। পরে তুমি তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারো।”
[আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রহ.]
ফতোয়া-২:
ইসলাম ওয়েব-এর ফতোয়া:
ডাকাত এবং অশান্তি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বা লুটতরাজকারীরা (মুহারিব) যদি তারা আত্মসমর্পণ না করে এবং অস্ত্রের সাহায্যে লড়াই করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং প্রয়োজনে তাদের সবাইকে হত্যা করা জায়েজ—এ বিষয়ে কোনও মতবিরোধ নেই। এছাড়াও যারা তাদের সাহায্য করে, আশ্রয় দেয় বা তাদের পক্ষে সমর্থন যোগায় তাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করা জায়েজ। তাদের মধ্যে যাকে হত্যা করা হবে তার রক্ত বৃথা যাবে (অর্থাৎ তার জন্য কোনও কিসাস বা হ**ত্যা**র বিনিময়ে হত্যার বিধান প্রয়োগ করা হবে না)। আর যদি তারা কাউকে হত্যা করে, তাহলে সে শহিদ হবে।
– শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন:
“মুসলিমরা এই বিষয়ে একমত যে, ডাকাতের বিরুদ্ধে লড়াই করা জায়েজ।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
منْ قُتِل دُونَ مالِهِ فهُو شَهيدٌ
“যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ।” [আবু দাউদ, তিরমিজি, সহিহ]
সুতরাং ডাকাতরা যদি কোনও নিরপরাধ ব্যক্তির সম্পদ দাবি করে তাহলে ইমামদের ঐকমত্য অনুযায়ী সেই ব্যক্তির জন্য তাদের কিছু দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং সে সহজ উপায়ে তাদের প্রতিরোধ করবে।
যদি সহজ উপায়ে তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব না হয় এবং লড়াই ছাড়া কোনও বিকল্প না থাকে তাহলে সে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে। যদি সে লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয় তাহলে সে শহিদ হবে। আর যদি সে এই অবস্থায় তাদের কাউকে হত্যা করে তাহলে তার রক্ত বৃথা যাবে। (অর্থাৎ তার ওপরে হত্যার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে না)
(শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য সমাপ্ত) ফতোয়া-৩:
আল্লামা শাইখ সালেহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)
প্রশ্ন: সম্মানিত শাইখ (আল্লাহ আপনাকে তৌফিক দান করুন), যদি কোনও মুসলিম চোর বা ডাকাতের সম্মুখীন হয়, যে তার সম্পদ লুটে নিতে চায় তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাকে হত্যা করা কি জায়েজ?
উত্তর:
সে তাকে প্রতিহত করতে প্রথমে সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করবে। যদি সহজ পদ্ধতিতে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা সম্ভব না হয় এবং তাকে হ**ত্যা করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় না থাকে তাহলে হ**ত্যা করা জায়েজ।” (শাইখের ভিডিও থেকে অনুবাদ) সারসংক্ষেপ:
১. সম্পদ ও জীবন রক্ষার জন্য লড়াই করা জায়েজ।
২. প্রথমে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
৩. যদি লড়াই করা ছাড়া কোনও উপায় না থাকে তাহলে লড়াই করা জায়েজ।
৪. যদি আক্রমণকারীকে হত্যা করা হয় তাহলে তার রক্ত বৃথা যাবে। (অর্থাৎ আদালতে তার উপরে হত্যার সাজা কার্যকর হবে না)
৫. যদি প্রতিরোধকারী নিহত হয় তাহলে সে শহিদ হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আধুনিক যুগে সিসি ক্যামেরা কিংবা মোবাইল ক্যামেরা বা অন্য কোন মাধ্যমে অপরাধীর অপরাধের প্রমাণ রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করার উচিত। এটি পরবর্তীতে আইন-আদালতে অপরাধ প্রমাণে সাহায্য করবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সকল অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি