
জাতীয় পতাকা কিংবা জাতীয় সংগীতের প্রতি দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের বিধান
প্রশ্ন: যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, স্যালুট করা হয় এবং জাতীয় সংগীত বাজানো হয় তখন দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানোর ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে
প্রথমত,
জাতীয় সংগীত বাজানো কিংবা শ্রবণ করা হারাম। জাতীয় সংগীত বাজানো হল নাকি কোন গান বাজানো হল না অন্য কিছু বাজানো হল এতে কোন বিশেষ পার্থক্য নেই।
দ্বিতীয়ত,
বিনয়াবনত ও ভক্তি সহকারে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা কারো জন্যেই মানানসই নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি আল্লাহর জন্যে করা হয়ে থাকে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
“আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও”। [সূরা বাকারাহ ২:২৩৮]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণে, মানুষের পরে অন্যতম শেষ্ঠ সৃষ্টি (ফেরেশতাগণ) শেষ বিচারের দিনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন এবং কেউ কোন কথা বলবেন না যতক্ষণ না আল্লাহ কাউকে কথা বলার অনুমতি প্রদান করেন। ( অর্থাৎ তারা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবেন)।
মহান আল্লাহ বলছেন,
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا ۖ لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ وَقَالَ صَوَابًا [٧٨:٣٨]
“যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্যকথা বলবে”। [সূরা নাবা, আয়াত নং- ৩৮]
যে কেউ কোন সৃষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি এই দাবী করে যে তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, তার মানে হল সে সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে এমন একটি অধিকার প্রদান করল যা কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হক বা অধিকার।
এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে লোকেরা তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তাহলে সে যেন জাহান্নামে নিজের বাসস্থান করে নেয়”। (তিরমিযি, ২৭৫৫; হাদীসটি সহীহ, আলবানী একে সহীহ বলেছেন সহীহ আল তিরমিযিতে) এর কারণ, এটি এমন একটি সম্মান এবং শক্তি ও গর্বের অংশ যা কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অধিকার। (দ্র তাফসীর আল-তাহির ওয়াল-তানভির, আল তাহির ইবন আশুর কর্তৃক ১৫/৫১)
খলিফা আল মাহদি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে উপস্থিত সব লোকেরা দাঁড়িয়ে গেল কিন্তু ইমাম আবি যি’ব দাঁড়ালেন না। তাকে একথা বলা হল; দাঁড়াও, ইনি আমিরুল মুমিনিন। তিনি বললেনঃ লোকেদের কেবলমাত্র তাঁর সম্মানে দাঁড়ানো উচিত যিনি সমস্ত জগতসমূহের প্রভূ। আল মাহদি বললেনঃ “তাঁর জন্যেই তা, আমার মাথার সবগুলো চুলও যেন দাঁড়িয়ে যায়”। সিয়ার আ’লাম আল-নুবালা’ (৭/১৪৪)
স্টান্ডিং কমিটির সম্মানিত আলেমগণের নিকট জানতে চাওয়া হয়েছিল; জাতীয় পতাকা কিংবা জাতীয় সংগীতের প্রতি দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের অনুমতি আছে কি?
তারা জবাবে বলেছেনঃ একজন মুসলমানের জন্যে এই অনুমতি নেই যে, সে জাতীয় সঙ্গীত কিংবা পতাকার জন্যে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করবে, বরং এটি একটি নিন্দনীয় বিদ’আত যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় প্রচলিত ছিল না, আর খুলাফায়ে রাশেদিনের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সময়েও এর কোন প্রচলন ছিল না। এবং এটা পরিপূর্ণ তাওহীদের শিক্ষা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিপন্থী। এটি এমন একটি মাধ্যম যা শিরকের দিকে চালিত করে এবং কুফফারদের নিন্দনীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণের দোষে দুষ্ট, উপরন্তু এর দ্বারা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি তারা যেভাবে সম্মান দেখায় ও তাদের আচার অনুষ্ঠানের অনুসরণ করা হয়ে থাকে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন।
আর আল্লাহই হলেন সকল শক্তির উৎস। আল্লাহ তাঁর রাসূল ও তাঁর পরিবার এবং সাহাবাগণের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন। ফাতাওয়া আল লাজানাহ আল দায়িমা (১/২৩৫)
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
মূলঃ শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ