
মুছল্লীদের জন্য সতর্কবানী
মুছল্লীদের জন্য সতর্কবানী
মূলঃ আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন
অনুবাদঃ শায়খ আব্দুছ ছামাদ সালাফী
অনুলিখন: মাকসুদ বিন আমাল
আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক মানুষ আযানের পরও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। কতিপয় লোক আবার জামা’আতের গুরুত্বই দেয় না। হাতের কাজ শেষ করে ইচ্ছামত ছালাত আদায় করেন। ব্যস্ততার মধ্যে অনেকেই তাড়াহুড়া ও দৌড়াদৌড়ি করে জামা’আতে শরীক হবার চেষ্টা করেন। তাড়াহুড়ার চোটে অনেক সময় মসজিদে গুম গুম আওয়ায হয়। এতে যেমন নিজে ক্লান্ত হন, তেমনি অন্যদের একাগ্রতায়ও ব্যাঘাত ঘটান। এছাড়া আরো কিছু ভুল-ত্রুটি আছে, যা নিম্নে বর্ণিত হ’লঃ
(১)জামা’আত ও রুকু ধরা জন্য দ্রুত মসজিদে যাওয়ায় ছালাতের খুশূ খুযূ ও সম্মান নষ্ট হয়। অন্য মুছল্লীদেরকেও বিরক্ত করা হয়। রাসূল (ছাঃ) এ মর্মে বলেন,
অর্থঃ ‘যখন এক্বামত হয়ে যায়, তখন তোমরা দৌড়ে এসো না; বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে এসো। যাতে করে তোমাদের স্থিরতা বজায় থাকে’ (বুখারী ও মুসলিম)।
(২) সিগারেট, হুক্কা প্রভৃতি দুর্গন্ধময় ও ঘৃণিত বস্তু ব্যবহার করা। যা পেয়াজ, রসুনের চেয়েও বেশী দুর্গন্ধময়। এতে ফেরেশতামণ্ডলী ও মুছল্লিবৃন্দ বেশ কষ্ট পান। অতএব সকল মুছল্লীর উচিৎ এসব দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু পরিত্যাগ করে সাধ্যমত সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যাওয়া।
(৩) অনেক মুছল্লীকে দেখা যায়, ইমাম যখন রুকূতে যান তখন রুকূ পাবার জন্য তাঁরা রুকূতে গিয়ে তাকবীর (তাকবীরে তাহরীমা) বলেন। অথচ এ তাকবীর দাঁড়ানো অবস্থায় বলা উচিৎ ছিল। ইমাম যদি (তাড়াহুড়া করে) রুকূতে চলে যান, তাহলে মাসবূকের জন্য তাকবীরে তাহরীমাই যথেষ্ট। রুকূর তাকবীর না বললেও চলবে।
(৪) মুছল্লীগণ কোন কোন সময় আকাশের দিকে, ইমামের দিকে এবং ডানে-বামে তাকান। সেজন্য ছালাতে ভুল হয় এবং মনে নানা ধরণের কথা ও কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। সেকারণে ছালাতে সেজদার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার নির্দেশ এসেছে।
(৫) ছালাতে ঘনঘন নড়াচড়া করা, হাতের আঙ্গুলগুলিকে তাশবীক (এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করানো) করা, নখের ময়লা পরিষ্কার করা, অবিরাম পদযুগল নড়াচড়া করা, টুপি, পাগড়ি, রুমাল ও একান (মাথার রুমালের উপরের কালো বেড় বা রশি) সোজা করতে থাকা, ঘড়ি দেখা, লুঙ্গী খুলে পরা প্রভৃতি কাজ করলে হয় ছালাত বাতিল হবে না হয় নেকী কম হবে।
(৬) ইমামের সাথে প্রতিযোগিতা করা বা তাঁর সাথে ছালাতের কার্যাদি যেমন রুকূ, সিজদা করা অথবা অনেক পরে পরে ছালাতের কার্যাদি সম্পন্ন করা অনুচিৎ। মুছল্লীদের এসব বিষয় থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
(৭) তারাবীহ’র ছালাতে কুরআন দেখে পঢ়া বা ইমামের তেলাওয়াতের অনুসরণের জন্য কুরআন খুলে রাখা। নিষ্প্রয়োজনে এসব করা ক্রীড়া-কৌতুকের শামিল। তবে তা যদি ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য হয়,তাতে কোন দোষ নেই।
(৮) রুকূতে পীঠ কুঁজো করতে বা মাথা নীচু করতে হাদীছে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীছে বলা হয়েছে, ‘পীঠ সোজা রাখতে হবে আর মাথা না উঁচু না নীচু হবে; বরং সোজা রাখতে হবে’।
(৯) ছালাতে ধীরস্থিরভাবে এবং যথাযত নিয়মে সিজদা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। হাদীছ শরীফে ৭টি হাড়ের উপর সিজদা করতে বলা হয়েছে (ললাট, দুই হাতের তালুদ্বয়, দুই হাঁটু এবং দুই পা)। কিন্তু এসব অঙ্গের কোন অঙ্গ মাটি হতে উঠিয়ে রাখা হয়। যেমন- পাগড়ীর সামনের অংশের উপর সেজদা করা, কপাল মাটিতে না ঠেকানো, শুধু কপালের উপর সেজদা করা, নাক মাটিতে না ঠেকানো, দুই পা মাটি হতে উঠিয়ে রাখা ইত্যাদি। যার ফলে বর্ণিত সাত অঙ্গের উপর সিজদা হচ্ছে না।
(১০) কিছু কিছু ইমাম এত হালকা করে ছালাত আদায় করেন যে, তা’দীলে আরকান করেন না। এহেন পরিস্থিতিতে মুক্তাদীগণ ইমামের ইক্তেদা করার সুযোগ পান না এবং প্রয়োজনীয় দো’আ ও তাসবীহ পাঠ করতে পারেন না। এহেন কার্যকলাপ ইতমিনান সংক্রান্ত হাদীছের সরাসরি বিরোধী। এতএব ইমামকে এমনভাবে রুকূ-সিজদা করতে হবে , যাতে মুক্তাদীগণ স্বাভাবিক গতিতে রুকূ ও সেজদা করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় দো’আ ও তাসবীহ পাঠ করার সুযোগ পান। আর এটিই সুন্নাত।
(১১) কিছু কিছু লোক আছেন যারা ছোট জামা এবং আঁটসাঁট পাজামা বা প্যান্ট পরিধান করে ছালাত আদায় করেন। ফলে পেছনের মুছল্লীদের চোখে উচু-ণীচুগুলি ধরা পড়ে। এগুলি ঠিক নয়।
(১২) অনেকেই আবার সালাম ফিরানোর পর ডানে-বামের ভাইদের সাথে সালাম-মুছাফাহ করেন এবং বলেন, আল্লাহ আপনার ও আমার আমল কবুল করুন। এ আচরণ নিঃসন্দেহে বিদ’আত। কারণ নবী করীম (ছাঃ) ও ছাহাবাগণের থেকে এ বিষয়ে কোন হাদীছ বা আছার পাওয়া যায়নি।
(১৩) ফরয ছালাতান্তে সমষ্টিগতভাবে হাত তুলে দো’আ করার অভ্যাস অনেকেরই আছে, যা সুন্নাতবিরোধী।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে ভুলত্রুটি মুক্ত ছালাত আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
(সূত্র: পুরনো আত-তাহরীক)