গৃহ যুদ্ধের দাবানলে জ্বলছে সিরিয়া: এক মহা সংকটের কবলে মুসলিম বিশ্ব (২য় পর্ব)

বাশার আল আসাদ ও তার সম্প্রদায়ের আসল চেহারা:

– আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক

বাশার আল-আসাদ (আরবি: بشار الأسد, বাশার আল-আসাদ) (জন্ম: ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) সিরিয়ার অর্থাৎ সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, বাথ পার্টির আঞ্চলিক সচিব এবং সাবেক সিরীয় রাষ্ট্রপতি হাফেজ আল-আসাদের পুত্র ও রাজনৈতিক উত্তরসূরি। আল-আসাদ পরিবার সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিসরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারটি মূলত সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাবী বা নুসাইরিয়া সম্প্রদায় হতে আগত যার আদিবাস মূলত লাতাকিয়া প্রদেশের ক্বারদাহা শহরে। আরবি ভাষায় আল-আসাদ শব্দের অর্থ ‘সিংহ’।
এই পরিবার সিরিয়ার রাজনীতিতে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আগমন করে। বাশার আল-আসাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ সিরিয়ার সামরিক অসামরিক বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ও নেতৃস্থানীয় পদসমূহে আসীন রয়েছেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও মূল আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করে আছেন। বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টি বর্তমানে সাংবিধানিক ভাবে সিরিয়ার সরকারী দল। ২০০০ সালে রাষ্ট্র-পতিত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত বাশার সিরিয়ার রাজনীতিতে তেমন ভাবে জড়িত হননি। বরং ক্ষমতার রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে তিনি এর আগে সিরিয়ার কম্পিউটার সমিতির প্রধান ছিলেন। উল্লেখ্য এই কম্পিউটার সমিতির অবদানেই ২০০১ সালে সিরিয়ায় ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটে। বাশার আল-আসাদ ২০০১ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে স্থায়িত্ব অর্জন করেন।প্রথমে আমরা তাদের সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করব। মূলত নুসাইরিরা একটি বাতেনী ফিরকা। এদের আকীদা অত্যন্ত জঘন্য এমন কি অনেক শিয়াও এদের মুসলিম মনে করেনা। বর্তমান তাদের অধিকাংশ লোকের বসবাস সিরিয়ার দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল, লেবাননের উত্তরাঞ্চল, ইরান, রাশিয়ান তুর্কিস্তান ও কুর্দিস্তানে তাদের বসবাস রয়েছে”।
এই ফিরকার বিভিন্ন নাম রয়েছে, যার কতিপয় তারা পছন্দ করে, কতিপয় অপছন্দ করে, যেমন:১- “আন-নুসাইরিয়া”:
এ নাম তাদের অন্যান্য নামকে ছাপিয়ে গেছে। এ নামে তারা অধিক প্রসিদ্ধ, কিন্তু এটা তারা মোটেই পছন্দ করে না, বরং এ নামের কারণে তারা নিজেদের হেয় মনে করে তাদের ধারণা তুর্কীরা যখন সিরিয়া শাসন করছিল, তখন নুসাইর নামক যে পাহাড়ে তারা বসবাস করত, তার সাথে সম্পৃক্ত করে তারা তাদেরকে নুসাইরি বলে। উদ্দেশ্য তাদের থেকে বদলা নেয়া ও তাদেরকে হেয় করা। অতঃপর ফরাসিরা সিরিয়া দখল করে তাদের উপর ‘আলাবি’ নামের প্রয়োগ করে, যা তাদের খুব পছন্দ হয়। এ জন্য নুসাইরিরা ফরাসিদের সম্মান করে ও বন্ধুভাবে। ফরাসিরা এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নুসাইরি পাহাড়ের নাম পরিবর্তন করে আলাবি অঞ্চল নাম রাখে।
প্রাচ্যবিদ “রেসু” থেকে তাদের নুসাইরি বলার আরেকটি কারণ জানা যায়। তিনি বলেন: নাসারা বা নসরানীর সাথে সামঞ্জস্যতার কারণে তাদেরকে নুসাইরি বলা হয়। তবে অধিকতর যৌক্তিক হল এ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা আবু শু‘আইব, মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর আল-বসরি, আন-নুমাইরির নামে তাদের নামকরণ করা হয়েছে।[নুসাইরিয়া স ম্প্রদায়,ডঃ গালিব ইবন আলী আওয়াজী, অনুবাদ, সানাউল্লাহ নাজির আহ মাদ, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ২o১২,পৃ,১৭ ]
২. “আলাবি”: আলাবি নুসাইরিদের পছন্দনীয় নাম। তারা এ নাম খুব পছন্দ করে, তারা চায় সবাই তাদের এ নামে ডাকুক, অন্য নাম ভুলে যাক। তারা আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ইবাদত করে ও তাকে ইলাহ হিসেবে জানে, তাই তাদেরকে ‘আলাবি’ বলা হয়।
৩. “সূরাহ্‌ কা”: তুর্কীরা তাদের উপর এ নাম প্রয়োগ করে। সময়ের বিবর্তনে মানুষ তা “সুরাক” বলে।
৪. নুমাইরিয়া: নুসাইরিদের অপর নাম নুমাইরিয়া। মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর আন-নুমাইরির নামে তাদেরকে নুমাইরিও বলা হয়। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে তারা অন্যান্য নামেও পরিচিত, যেমন পশ্চিম আনাটোলিয়ায়[বর্তমান তুরস্কের অধীন। উত্তরে কালো সমুদ্র, উত্তর পশ্চিমে জর্জিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে সিরিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে ইরাক ও পূর্বে ইরান।] “তাখতাজিয়্যাহ” বা “আল-হাত্তাবুন” এবং ইরান, তুর্কীস্তান ও কুর্দিস্তানে “আলি ইলাহিয়্যাহ” নামে পরিচিত”।

নুসাইরিদের উত্থানঃ শিয়াদের ধারণা সব যুগে একজন ইমাম থাকেন যিনি মানুষের যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন কোন যুগ ইমাম বিহীন থাকা সম্ভব নয়, অন্যথায় মানুষের জীবন অচল হতে বাধ্য। রাজতন্ত্রের ন্যায় ইমামের ছেলে ইমাম হবেন, অন্য কেউ নয়। এ হিসেব শিয়াদের একাদশ ইমাম হাসান আসকারির নিঃসন্তান মারা যাওয়ার কারণে ইমামিয়া আকিদা চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। কেউ হাসান আসকারির ছেলে ধারণা করে নেন, যার নাম মুহাম্মদ, যেহেতু বাস্তবে ছিল না, তাই তারা বলেন জন্মের পরই সে গর্তে বা সমাধিগৃহে আশ্রয় নিয়েছে। অপর দল বাস্তবতা মেনে নিয়ে তার সন্তানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। এভাবে তাদের মধ্যে বিভিন্ন দল-উপদলের সৃষ্টি হয়।দ্বাদশ ইমাম যেহেতু বাহ্যিক ছিলেন না, তাই যারা অদৃশ্য ইমাম মানে তারা “বাব” এর থিউরি উদ্ভাবন করেন। “বাব” আহলে বাইতের খাস ব্যক্তি, তিনি অদৃশ্য ইমাম ও মানুষের মাঝে মধ্যস্থতা করেন।
এ কুসংস্কারের জন্য তারা একটি জাল হাদিস পেশ করে। তাদের ধারণায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
((من طلب العلم فعليه بالباب)، (أنا مدينة العلم وعلي بابها).
“যে ইলম অন্বেষণ করে, সে যেন অবশ্যই বাবকে আঁকড়ে ধরে। আমি ইলমের শহর আর আলি তার বাব”।[সিল-সিলা যঈফা ,হা/২৯৫৫]

প্রথম “বাব” আলি ইব্‌ন আবু তালিব, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের “বাব” ছিলেন। দ্বিতীয় “বাব” সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি আলি ইব্‌ন আবু তালিবের “বাব” ছিলেন। এভাবে তারা একাদশ ইমাম হাসান আসকারি পর্যন্ত “বাব” নির্ধারণ করে। অতঃপর দ্বাদশ ইমামের “বাব” নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। নুসাইরিদের দাবি দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ ইব্‌নুল হাসান আসকারির কোন “বাব” ছিল না, বরং “বাবের” ধারাটি একাদশ ইমাম হাসান আসকারি পর্যন্ত চলমান ছিল, অর্থাৎ তিনি বাব ছিলেন আবু শুআইব মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর এর। এ থেকে নুসাইরিয়া ও দ্বাদশ ইমামিয়ার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাই মুহাম্মদ ইব্‌ন নুসাইর ও তার দল শিয়া দ্বাদশ ইমামিয়া থেকে বের হয়ে যায়। এভাবেই নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। উল্লেখ্য যে ইরানের শিয়ারা দ্বাদশ ইমামিয়ায় বিশ্বাসী। বস্তুত ইমামিয়া শিয়ারা নির্বুদ্ধি, তাদের উপর তাদের তথাকথিত পাগড়ি-ধারী ধর্মীয় নেতারা মিথ্যাচার করে নেতৃত্ব করে যাচ্ছে। তারা মনে করছে এ তথাকথিত দ্বাদশ ইমাম লোকটি পাহাড়ে লুকিয়ে রয়েছে, তাই তারা পাহাড়ের পাদ-দেশে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণ বলতে থাকে, “হে আমাদের মাওলা, তুমি বের হয়ে এস”।তাদের এ জাতীয় কার্যকলাপ হাস্যকর বৈ কিছু নয়।
নুসাইরিদের আকীদাঃ আগেই আমরা বলেছি এদের আকীদা অত্যন্ত খারাপ। নিচে এদের প্রসিদ্ধ কিছু আকীদা তুলে ধরা হল।
১, নুসাইরিরা সম্প্রদায় আলি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর প্রভুত্বে বিশ্বাস করে। খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের ন্যায় এক সত্তা তিন সত্তার মধ্যে দেহধারণ করার মতবাদ নুসাইরিদের ধর্মে রয়েছে। তারা মনে করে এ তিন সত্তা মূলত এক সত্তা ও চিরস্থায়ী।
নুসাইরিদের তিন সত্তার নীতি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদের সমতুল্য। তারা তিন সত্তার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করে, যথা: (ع.م.س) তারা বলে: এ তিন সত্তার মধ্যে আল্লাহ দেহধারণ করেছেন
এক. আলি, তার জন্য তারা (المعنى) শব্দ ব্যবহার করে।দুই. মুহাম্মদ, তার জন্য তারা (الاسم) শব্দ ব্যবহার করে।তিন. সালমান, তার জন্য তারা (الباب) শব্দ ব্যবহার করে। ع দ্বারা আলি, م দ্বারা মুহাম্মদ ও س দ্বারা সালমান ফারসি উদ্দেশ্য।[নুসাইরিয়া স ম্প্রদায়,ডঃ গালিব ইবন আলী আওয়াজী, অনুবাদ, সানাউল্লাহ নাজির আহ মাদ,২১২, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ পৃ,১৯ ]২, আলি মুহাম্মদকে সৃষ্টি করেছেন, মুহাম্মদ সৃষ্টি করেছেন সালমান ফারসিকে, সালমান ফারসি সৃষ্টি করেছেন পঞ্চ ইয়াতীমকে, যাদের হাতে আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণ। তারা হলেন:
১. মিকদাদ: তিনি মানুষের রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ চমক, মেঘের গর্জন ও ভূমিকম্প।
২. আবুদ দার: (আবুযর গিফারী), তিনি নক্ষত্র ও তারকারাজির কক্ষপথসমূহ নিয়ন্ত্রণ করেন।
৩. আব্দুল্লাহ ইব্ন রাওয়াহা আল-আনসারী: তিনি বাতাসের নিয়ন্ত্রক ও মানুষের রূহ কব্জাকারী।
৪. উসমান ইব্ন মায‘উন: তিনি শরীরের জ্বর, পেট ও মানুষিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী।
৫. কুন্বর ইব্ন কাদান: তিনি মানুষের শরীরে রূহ সঞ্চারকারী।
[ঐ, পৃ ৫৪।]
এসব আকিদা প্রমাণ দেয় তারা ইসলামের নাম ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করে নি। এসব আকিদা কুফরির চূড়ান্ত পর্যায়ের আকিদা, এর যে কোনও একটিই আল্লাহর দীন থেকে বের করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

৩, নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের আকিদার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা। তারা এ বিশ্বাসের অন্তরালে কিয়ামত, পরকাল, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশ অস্বীকার করে।তাদের নিকট শরীরই জান্নাত বা জাহান্নাম। তারা সুন্দর, সুখী ও ভালো শরীরে প্রস্থান করে শান্তি পায়; আর কুৎসিত, দুঃখী ও খারাপ শরীরে প্রস্থান করে শাস্তি ভোগ করে, যেমন কুকুর, শূকর, সাপ, বিচ্ছু ও গুবরেপোকা। এভাবে চিরজীবন শরীরই তাদের জান্নাত বা জাহান্নাম, এ ছাড়া কিয়ামত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম বলতে কিছু নেই।[ঐ, পৃ ৬৯।]
এছাড়াও তারা মদের মত নিকৃষ্ট বস্তু পবিত্র মনে করে তাদের ধর্ম শিখার জন্য মদ খাওয়া অপরিহার্য।
আর এই সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি সম্পর্কে এত টুকুই বলা যথেষ্ট যে, যখন সিরিয়ার মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে নিজের রক্তে দামেস্কের রাজপথ রঞ্জিত করছিল, তখন এই সম্প্রদায় ফ্রান্সের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত ছিল। [ মধ্য প্রাচ্য: অতীত ও বর্তমান,ইয়াহিয়া আরমাজানী, বাংলা অনুবাদ,মুহাম্মাদ ইনামুল হক,জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ২৮,পৃ, ৩২৮]

উল্লেখ্য যে ফ্রান্সের সাথে এদের আগে থেকেই ভাল সম্পর্ক যা আমরা পূর্বেই কিছুটা দেখেছি। এ পর্যায়ে বাশার আল আসাদ পরিবারের কিছু ইসলামবিদ্বষী কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হল। আসলে শিয়ারা সর্বদা ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। এরা মুখে ইসলামের নাম নিলেও এদের আন্তরে রয়েছে চরম ঘৃণা। যার সুযোগ মত ভয়াবহভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন ২-ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই. হামা শহরে নুসাইরি [আলাবি] বংশের প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে
অন্যদিকে অনেককেই বলতে দেখা যায় যে বাশার সরকার ইসরায়েল ও আমেরিকা বিরোধী। কিন্তু বিষয়টি প্রশ্ন সাপেক্ষ। ১৯৬৭ই. সনে ইসরাইল মিসরে হামলা করে সিনা উপত্যকা দখল করে নেয়, ফলে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ আরম্ভ হয়, যা ছয়দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। সিরিয়া ও জর্ডানের চুক্তি ছিল, ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে জর্ডান ও সিরিয়া ইসরাইলের উপর একযোগে আক্রমণ করবে। নির্দিষ্ট সময়ে জর্ডান হামলা করেছে ঠিক, কিন্তু সিরিয়ার সেনাপ্রধান ফিলিস্তিনিদের সাহায্য থেকে বিরত থাকে। ফলশ্রুতিতে মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার পরাজয় ঘটে। এ যুদ্ধে ইসরাইল মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিশরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, বায়তুল মোকাদ্দাসের পূর্বাংশ এবং গাজা উপত্যকা দখল করে নেয়। তখন সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার এর পিতা হাফেয আল-আসাদ। হাফেয আল-আসাদ তার বাহিনীকে হামলায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখে এবং সিরিয়ার উঁচু ভূখণ্ড গোলান মালভূমি, যা যুদ্ধের কৌশলগত দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ, ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়। সেখান থেকে সিরিয়ার সৈন্য বাহিনী সরিয়ে আনে, অতঃপর সংবাদপত্রে মিথ্যা প্রচার করে যে, ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে, অথচ তখনো ইসরাইল বাহিনী সেখানে পৌঁছায় নি। তখন সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদিদ তার ভূমিকার সমালোচনা করেন। এভাবে হাফেয আল-আসাদ জর্ডানের সাথে গাদ্দারি করে ইসরাইলের হাতে নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমি তুলে দেয়। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সালাহ জাদিদ ও সেনা বাহিনী প্রধান হাফেয আল-আসাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। সালাহ জাদিদ জরুরি বৈঠক ডেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু হাফেজ আল-আসাদ সেনাবাহিনীতে থাকা তার ঘনিষ্ঠ সাথীদের নিয়ে নুরুদ্দিন আতাসি ও সালাহ জাদিদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে জেলে বন্দি করে। [প্রেসিডেন্ট “নুরুদ্দিন আতাসি” ও প্রধান মন্ত্রী “সালাহ জাদিদ” উভয়ের মেয়াদকাল ২৫ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৬ই.– ১৮নবেম্বর, ১৯৭০ই.।] এখানে নুসাইরি বংশদ্ভুদ হাফেজ আল-আসাদ বংশের মুসলিম বিদ্বেষ ও গাদ্দারি স্পষ্ট। [দেখুনঃ হাফিজ আল আসাদ, উন্মুক্ত বিশ্বকোষ ইউকিপিডিয়া।]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button