শিক্ষা

রচনা: মুহাঃ কাবিরুল ইসলাম

অনুলিখন: মুহাম্মাদ ফয়সাল ইমরান

আমরা হলাম মুসলিম। আসলে আমরা শিক্ষিত জাতি।কিন্তু বর্তমান মুসলিমরা দ্বীনী এবং দুনিয়াবী উভয় প্রকার শিক্ষা থেকে বহুদূরে সরে গিয়েছে। বিশেষ করে দ্বীনী শিক্ষা থেকে তো বহুদূরে সরে গিয়েছে। এর সঙ্গে কোন প্রকার সম্পর্কই রাখতে চায় না। ফলস্বরূপ তারা আজ ইসলাম থেকেও দূরে সরে গিয়েছে। আর দুনিয়াবী ক্ষেত্রে তো অনবরত লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে।

আজ ইহুদিরা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার বিচারে মুষ্টিমেয় হয়েও বিশ্ব অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে, প্রচার মাধ্যমে নিজেদের লাঠি ঘোরাচ্ছে। বি.বি.সি. সি.এন.এন.-এর মত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে পরিচালনা করছে ইহুদিরা। তারা নিজেদের উন্নতির হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে শিক্ষাকে, তাদের মধ্যে শিক্ষার, শিক্ষিত লোকের অভাব নেই।

বর্তমানে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের প্রধান ভাষা হল হিব্রু। যে হিব্রু ছিল মৃতপ্রায় সেই ভাষাকে তারা রাষ্ট্রীয় ভাষায় শুধু পরিণত করেনি বরং প্রত্যেক ইহুদির জন্য হিব্রু ভাষা জানা বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। এমনকি ব্রিটেনের কিছু ইহুদি স্কুলের নিয়মই হল, যে ধর্ম ও বর্ণের ছাত্র-ছাত্রীই হোক না কেন তাকে হিব্রু ভাষা শিখতেই হবে। তাতে তো তাদের মান সম্মান বিন্দু পরিমাণ কমেনি, উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি।

আর আমরা মুসলিমরা নিজেদের ছেলেমেয়েকে আরবী শেখাতেই চাই না। আমরা যে আরবী শিখাবো না, ক্কুরআন, হাদিস শিখাবো না –এটা যেন প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছি। মনে হয় শিখলেই যেন আমরা ভিখারী হয়ে যাব, মান সম্মান চলে যাবে। আমাদের মন-মানসিকতারই আমূল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আরবী না শিক্ষা করে মুসলিমরা কী পেয়েছে বলুন? অপরপক্ষে আরবী না শিখে তারা যে কত কিছু হারিয়েছে তা জ্ঞান সহপন্ন পাঠকগণই উপলব্ধি করতে পারেন।

এবারে আসুন দেখি আমাদের জ্ঞানের মূল উৎস ক্কুরআন হাদিস কী বলে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে-

রসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত ওহীর সর্বপ্রথম বাক্যই হল,

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ

‘তুমি পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আলাক্ক ৯৬:১)।

মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

“যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বোধ-শক্তিসহপন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে” (সূরা যুমার ৯)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ্‌ তাদের বহু মর্যাদায় উন্নীত করবেন” (সূরা মুজাদালাহ ৫৮:১১)।

এছাড়াও হাদীসে মহানাবী (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয (অপরিহার্য)” (সহীহুল জামে ৩৯১৩ নং)।

রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

“আল্লাহ্‌ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনী জ্ঞান দান করে থাকেন” (বুখারী ৭১ নং, মুসলিম ১০৩৭ নং)।

এছাড়াও আরও অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে যেখানে জ্ঞানের, শিক্ষার বিশেষ করে দ্বীনী জ্ঞানের মাহাত্ম্যের কথা বলা হয়েছে। যা এই অল্প পরিসরে লেখা সম্ভব নয়।

এত মাহাত্ম থাকা সত্বেও আজ আমরা, মুসলিমরা এগুলোর কোনো গুরুত্বই দিই না। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরাও গবেষণা করে দেখেছেন, ‘যে ছেলেমেয়ে যত বেশি ভাষায় পারদর্শী, দক্ষ সে তত ভাল করে অন্যান্য ভাষাভাষি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে, তাদের বুঝাতে পারে। সে তত বেশি ভাল করে অন্যান্য বিষয়ও আয়ত্ত করতে পারে। তাঁর বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়।’

তাই আমাদের একথা ভাবলে চলবে না যে একসঙ্গে বাচ্চারা কী করে একের অধিক ভাষা শিক্ষা করবে। কারণ পৃথিবীর অনেক দেশেই ছোট বাচ্চারা একসঙ্গে অনেক ভাষা আয়ত্ত করে। তাই আসুন আমরা আমাদের বাচ্চাকে ক্কুরআন শিক্ষার উদ্দেশ্যে আরবী ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করি।

পরিশেষে আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি, তিনি যেন আমাদের সুমতি দান করেন, আমাদের ইলম দান করেন, আমাদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেন (আমীন)।

সূত্র: মাসিক সরলপথ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button