
পরগৃহে প্রবেশের ইসলামী পদ্ধতি
রচনায়: হাফেজ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন
মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে অপরের পাড়া-প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করে। প্রয়োজনে পরস্পরের বাড়ী ঘরে যাওয়া-আসা করতে হয়। কিন্তু অন্যের ঘরে অবাধ যাওয়া আসা ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকে নির্লজ্জতা এবং অশ্লীলতা বিস্তারের সূচনা হতে পারে। একারণেই ইসলাম পরগৃহে প্রবেশের বিধান দ্বারা এ অশুভ উৎস নির্মুল করতে চায়। সুগম করতে চায় সতীত্ব সংরক্ষণের পরিবেশকে। আমরা এখানে আল কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরগৃহে প্রবেশের বিধানসমূহ আলোচনা করব।
মানুষ সাধারণভাবে বাড়ীঘরে বসবাস করে। বাড়ী ঘরের বসবাসের আসল উদ্দেশ্য শান্তি ও আরামে বাস করা। পবিত্র কুরআন মানুষকে প্রদত্ত নি’আমতের বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ
وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّن بُيُوتِكُمْ سَكَنًا وَجَعَلَ لَكُم مِّن جُلُودِ الْأَنْعَامِ بُيُوتًا تَسْتَخِفُّونَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ إِقَامَتِكُمْ
আল্লাহ তোমাদের গৃহে তোমাদের জন্য আরাম ও শান্তির ব্যবস্থা করেছেন…………..। (সূরা আন নাহল-৮০)
নিজগৃহে স্বাধীনভাবে কাজ করা এবং বিশ্রাম করাই শান্তি। বিনা অনুমতিতে বাইরের কেউ ঘরে প্রবেশ করলে ঘরের এ স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। এজন্যই ইসলাম অন্যকে কষ্ট দেয়া হারাম করেছে এবং অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে।
অনুমতি গ্রহণের তাৎপর্য
কারও ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে ঘরের অধিবাসীদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকে। আগন্তুকের প্রতি সন্তুষ্ট হয়, পক্ষান্তরে অনুমতি না নিয়ে ঘরে হঠাৎ প্রবেশ করলে গৃহবাসীর অধিকার সংরক্ষিত থাকে না।
অনুমতি নিয়ে যার ঘরে আসা হয় তিনি আগন্তুকের প্রয়োজন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করেন এবং তার প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হন। অনুমতি না নিলে অন্তরে ক্ষোভের সঞ্চার হওয়ার আশংকা থাকে। আপন ঘরে মেয়েরা অনেক সময় অসতর্ক অবস্থায় বিচরণ করেন। বিনা অনুমতিতে কেউ প্রবেশ করলে উভয় পক্ষকে অপ্রস্তুত হতে হয়। এছাড়া আগন্তুকের মনে অশুভ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে এ বিব্রতকর অবস্থা হতে মুক্ত থাকা যায়।
ঘরের নির্জনতায় মানুষ কখনও এমন অবস্থায় থাকে, যা অন্য কারও কাছে প্রকাশ পাওয়া পছন্দ করেনা। এ ছাড়া অনেক সময় ঘরের পরিবেশ এমন অগোছালো থাকে, যা মেহমানের জন্য পছন্দনীয় নয়। সুযোগ পেলেই ঘরের মালিক সাবধানতা অবলম্বন করে সুষ্ঠু পরিবেশে আনন্দচিত্তে তাকে ঘরে তুলে আনতে পারে। অনুমতি না নিলে মুখে সস্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অন্তরে তিক্ততা বিরাজ করে।
মহান আল্লাহ দুনিয়া এবং আখেরাতের অগণিত কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রেখে পরগৃহে প্রবেশের বিধান জারী করে ইরশাদ করেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ ۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا ۖ هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍ فِيهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
“হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুপতি না নিয়ে এবং তাদের সালাম না করে প্রকাশ করোনা। এটি তোমাদের জন্য কল্যাণকর । । আশা করা যায় যে, তোমরা এর প্রতি খেয়াল রাখবে। যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও তবে অনুমতি না আসা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করবেনা। আর যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও তবে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতম কর্মনীতি। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন। যে ঘরে কেউ বাস করে না, সেখানে তোমাদের কোন কাজের জিনিস রয়েছে, এমন ঘরে প্রবেশ করতে তোমাদের কোন পাপ নেই। তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর আর যা গোপন রাখ সব বিষয় আল্লাহ জানেন। (সূরা আন নূর, আয়াত- ২৭-২৯)
উক্ত আয়াতের আলোকে পরপৃহে প্রবেশের বিধানসমূহ নিম্নে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হ’ল ?
১. আয়াতে হে মু’মিনগণ বলে পুরুষদের সম্বোধন করা হলেও নারীরাও এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত। সাহাবাগণের স্ত্রীরা এ আয়াতের আলোকে অনুমতি গ্রহণের বিধান পালন করতেন ।
হযরত উম্মে আয়াস (রা) বলেন, আমরা চারজন মহিলা প্রায়ই হযরত আয়িশার (রা) ঘরে যেতাম। প্রথমে আমরা তার কাছে অনুমতি চাইতাম । তিনি অনুমতি দিলে আমরা ভিতরে প্রবেশ করতাম।
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, অন্য কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে নারী-পরুষ মুহরিম ও গায়রে মুহরিম সকলেরই অনুমতি নেয়া ওয়াজিব।
২. অনুমতি গ্রহণের জন্য দুটি কাজ না করে কারও ঘরে প্রবেশ করা ঠিক নয়।
প্রথমতঃ প্রীতি বিনিময় করা বা অনুমতি লাভ করা। মূলতঃ ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি চাওয়া দ্বারা প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় এবং আগন্তুকের প্রতি আতংক দূরিভূত হয়।
দ্বিতীয়তঃ ঘরের লোকদের সালাম করা। ইমাম কুরতুবীর মতে প্রথমে অনুমতি নিয়ে পরে ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করবে। মাওয়ারদী বলেন, যদি অনুমতি নেয়ার পূর্বে ঘরের কোন ব্যক্তির সাথে দেখা হয়, তবে প্রথমে সালাম করবে। এরপর অনুমতি চাইবে । দেখা না হলে প্রথমে অনুমতি চাইবে। অনুমতি পাওয়া গেলে ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করবে। কিন্তু বিভিন্ন হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, বাইরে থেকে প্রথমে সালাম করতে হবে। তারপর নিজের নাম উচ্চারণ করে বলবে যে, অমুক সাক্ষাৎ করতে চায়।
আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, বানু আমের নামক গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূল (সা) এর কাছে এসে ঘরের বাইরে থেকে বললঃ আমি কি ঢুকে পড়ব? রাসূল (সা) হযরত আনাসকে বললেন, লোকটি অনুমতি চাওয়ার নিয়ম জানেনা। বাইরে গিয়ে তাকে নিয়ম শিখিয়ে দাও। সে প্রথমে আসসালামু আলাইকুম, তারপর বলুক আমি কি প্রবেশ করতে পারি? হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে প্রথমে সালাম না করে, তাকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিয়োনা।
এ সকল হাদীসের আলোকে ফকীহগণ বলেছেন যে, প্রথম সালাম হচ্ছে অনুমতির বাক্য শ্রবণের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য। অনুমতি লাভের পর ঘরে প্রবেশের সময় যথারীতি পুনরায় সালাম করতে হবে।
৩. অনুমতি লাভ করতে গিয়ে ঘরের ভিতরে তাকানো অথবা যে কোন সময় বাইরে থেকে কারও ঘরের ভিতরে তাকানো অবৈধ।
হযরত সাওবান (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ চক্ষু যখন ঘরের ভিতরে চলে যায়, তখন অনুমতি চাওয়া নিরর্থক হয়ে পড়ে। হযরত হুযাইল ইবন শুরাহবীল বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (সা) এর দরজার উপর দাড়িয়ে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি চাইল। প্রিয় নবী (সা) বললেন, সরে দাড়াও, অনুমতি চাওয়ার হুকুম তো এ জন্য যে ভিতরে যেন চোখ না পড়ে।
৪. ফিকাহবিদগণের মতে ঘরে দৃষ্টি দেয়ার ন্যায় ঘরের মধ্য থেকে বা বাইরে থেকে কারও গোপন কথা শ্রবণ করাও অবৈধ। এ জন্য অন্ধ লোককেও ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে, কারণ সে চোখে না দেখলেও কানে গোপন কথা শুনতে পাবে।
৫. অনুমতি ছাড়া কারও চিঠি পাঠ করা অবৈধ। হযরত আবদুল্লাহ বিন ইবন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ যে লোক তার কোন ভাইয়ের চিঠি অনুমতি ছাড়া পাঠ করল, সে যেন জাহান্নামের দিকে তাকালো।
৬. আপন মা ও বোনের ঘরে যেতেও অনুমতি নিতে হবে। ইমাম মালিক তার মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, নিজের মায়ের নিকট যেতেও কি আমি অনুমতি চাইব? তিনি বললেন, হা। লোকটি বলল, আমি ছাড়া তার খেদমতের আর কেউ নেই, এখন প্রত্যেকবারই কি আমি অনুমতি চাইব? তখন রাসূল (সা) বললেন, তুমি কি তোমার মাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখা ভাল মনে কর?
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলেনঃ তোমরা তোমাদের মা ও বোনদের নিকট যেতে হলে অনুমতি নিয়ে যাবে।
হযরত ইবন মাসউদ (রা) বলেছেন যে, নিজের ঘরে নিজের স্ত্রীদের নিকট যেতে হলেও অন্ততঃ গলার শব্দ করে প্রবেশ করবে। তার স্ত্রী যয়নব (রা) বলতেন, আমার স্বামী যখনই ঘরে আসতেন, তখন এমন কিছু শব্দ করে আসতেন যেন তার আগমন বুঝা যায়।
৭. দরজার কড়া নেড়ে অনুমতি চাওয়া বৈধ। তবে কড়া এত জোড়ে নাড়া উচিৎ নয়, যাতে ঘরের লোক চমকে ওঠে । কড়া নাড়ার সময় নিজের নাম বলতে হবে। অথবা ভিতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে সুস্পষ্টভাবে নিজের নাম বলতে হবে। হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) বলেন, আমি আমার মরহুম পিতার ঋণ সম্পর্কে কথা বলার জন্য নবীজির দরবারে গিয়েছিলাম। আমি দরজার কড়া নাড়তেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম আমি, তিনি বললেন, আমি, আমি, আমি বললে কি পরিচয় বুঝা যাবে? এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, পরিচয় জানতে চাইলে স্পষ্টভাষায় নাম না বলা বা আমি আমি বলা বা চুপ করে থাকা বৈধ নয়।
৮. কারও ঘরে হঠাৎ কোন বিপদ দেখা দিলে এমতাবস্থায় অনুমতি নেয়ার এ হুকুম প্রযোজ্য নয়। যেমন আগুন লাগলে, হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, বা চোর ঢুকে পড়লে সাহায্য করার জন্য বিনা অনুমতিতে ঘরে প্রবেশ করা যেতে পারে।
৯. রাসূল (সা) অনুমতি নেয়ার জন্য তিনবার আওয়াজ দেয়ার নিয়ম করে দিয়েছিলেন। হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি জওয়াব না আসে, তবে ফিরে আসা উচিৎ।
১০. কলিং বেল বা পরিচয় পত্র প্রদানের মাধ্যমে অনুমতি চাওয়া জায়েয। কলিং বেল বাজাবার সময় বা ভিতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে নামসহ পরিচয় দিতে হবে। পরিচয় পত্রেতো নাম উল্লেখ থাকবেই। এটা ইউরোপীয় প্রথা হলেও এতে অনুমতি চাওয়ার লক্ষ্য সুন্দরভাবে অর্জিত হয়।
১১. কারও নিকট অনুমতি চাওয়ার পর যদি বলা হয়, এখন ফিরে যান, পরে দেখা করুন, তবে এতে মনে কষ্ট না নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে আসা উচিৎ। এ মর্মে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- যখন তোমাকে আপাততঃ ফিরে যেতে বলা হয়। তখন সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে আসবে। একে খারাপ মনে করা বা দরজায় বসে থাকা উচিৎ নয়। (সূরা আন নূর আয়াত- ২৮)
অনুমতি প্রার্থীর প্রতি এ নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে ঘরের মালিকের প্রতি দৃষ্টি রেখে। কারণ তার বিশেষ কোন ওজর থাকতে পারে। পক্ষান্তরে হাদীস শরীফে বাড়ীর মালিককে, বলা হয়েছে যে, সাক্ষাৎপ্রার্থী ব্যক্তিরও তোমার উপর হক রয়েছে। তার হক হচ্ছে, তাকে কাছে ডাকা, বাইরে এসে তার সাথে দেখা করা, তার কথা শুনা, তাকে ঘরে বসতে দেয়া, তার সম্মান করা, মেহমানদারী করা একান্ত অসুবিধা না থাকলে তাকে ফিরিয়ে না দেয়া।
১২. কেউ যদি কোন বুযর্গ ব্যক্তি বা সম্মানিত ব্যক্তির সাক্ষাতে যায়, কোনরূপ সংবাদ না দিয়ে সে অপেক্ষা করে, তিনি তার অবসর সময়ে বাইরে আসলে দেখা করে, তবে এটা অপেক্ষা না করার বিধানে পড়বেনা। বরং এটাই হবে আদব বা শিষ্টাচার, পবিত্র কুরআনে এ মর্মে ইরশাদ হয়েছেঃ
وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তারা যদি নবীকে ডাকাডাকি না করে ধৈর্যের সাথে তিনি বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তবে এটা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হত । (সূরা আল হুজুরাত আয়াত- ৫)
১৩. যে ঘরে কেউ বাস করে না, সেখানে অনুমতির প্রয়োজন নেই, কারও ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতির বিধান নাযিল হওয়ার পর হযরত আবু বকর (রা) রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, এতে কুরাইশ ব্যবসায়ীদেরতো অসুবিধা হবে। কারণ তারা শামদেশে যাওয়ার সময় পথে সরাইখানাতে অবস্থান করে। এ সব ঘরে কোন স্থায়ী বাসিন্দা নেই, এখানে কিভাবে অনুমতি নেবে? এ সময় আয়াতের নিম্ন অংশ নাযিল হয়ঃ “যে সব ঘরে কেউ বাস করেনা, যেখানে তোমাদের ভোগ করার অধিকার আছে, এমন ঘরে প্রবেশ করতে তোমাদের কোন পাপ নেই।”
এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, মুসাফিরখানা, মসজিদ, জনহিতকর প্রতিষ্ঠান, চিত্তবিনোদনকেন্দ্র, ধর্মীয় পাঠাগার, চিকিৎসা কেন্দ্র দোকান পাট এসব স্থানে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে। তবে যে সব স্থানে কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে বা টিকেট এবং প্রবেশ পত্র ছাড়া ঢুকার অনুমতি নেই, সেখানে অবশ্যই নিয়ম মুতাবিক প্রবেশ করতে হবে।
১৪. টেলিফোনঃ কাউকে জানামত বিশেষ ব্যস্ততা, নামাজ, অজু-গোসল ও খাওয়া বা নিদ্রার সময় টেলিফোন করা জায়েজ নয়। হাঁ পূর্ব থেকে সময় নির্দিষ্ট থাকলে বা বিশেষ প্রয়োজন হলে টেলিফোন করা যেতে পারে। টেলিফোনে দীর্ঘ কথাবার্তা বলতে হলে, প্রথমেই জিজ্ঞেস করে অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। কারণ টেলিফোনের শব্দ শুনে মানুষ ব্যস্ততার সময়ও টেলিফোন ধরে। কোন নির্দয় ব্যক্তি যদি এ সময় দীর্ঘ আলাপ শুরু করে, তাতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়। আবার কেউ কেউ টেলিফোনের শব্দ শুনেও তা ধরতে চায় না এটাও শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।
১৫. কাউকে লোক পাঠিয়ে ডাকা হলে লোকের সাথে চলে আসলে অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে পরে আসলে বা টেলিফোনের সংবাদ আসলে অনুমতি নিতে হবে।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের উক্ত বিধানসমূহ সঠিকভাবে পালন করলে আমরা সামাজিকভাবে অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
সূত্র: মাসিক পৃথিবী পুরনো সংখ্যা