
আমি কিভাবে দ্বীনে এলাম
আলহামদুলিল্লাহ! আমার দ্বীনের পথে যথারীতি পারিবারিকভাবেই আসা৷ যেহেতু বিদ্যালয়ে ভর্তির বয়সে পৌঁছার পূর্বেই দাদা মারা গেছেন, তাই বাবা-মার পাশাপাশি আমার নানাও আমিসহ আমার ভাইদের পড়াশোনা করিয়ে গড়ার দায়িত্ব অত্যন্ত আনন্দচিত্তে নিজ কাঁধে তুলে নেন৷ বাবা-মা এবং নানার একান্ত ইচ্ছায় আমাকে স্থানীয় মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হলো৷ বয়স তখন আমার পাঁচ বছর৷ এরপর আলহামদুলিল্লাহ আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি৷ মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে ভর্তি হয়ে গেলাম হিফযে৷
.
.এই হিফযে পড়াটা হচ্ছে, প্রত্যেক ছাত্রের জন্যে তার জীবনের বিরাট বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়৷ এই হিফয থেকে অনেকে জীবনের পথও হারাতে পারে৷ আবার এখান থেকেই পেয়ে যেতে পারে জীবনের সঠিক পথের দিশা৷
শয়তান সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় থাকে একজন হিফযের ছাত্রকে পথহারা বানাতে৷ আল্লাহর পবিত্র কালাম আসমান-যমীন, পাহাড়-পর্বত কেউ যাঁকে গ্রহণ করার মতো সাহস যেখানে কেউ দেখাতে পারি নি, সেই কালামুল্লাহ শরীফ সীনায় ধারণ করা চাট্টিখানি কথা নয়৷ একমাত্র আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমতের ছায়া ব্যতীত কারো পক্ষে সম্ভব নয়৷
.
যাক, আল্লাহর বিশেষ রহমতে পবিত্র কুরআন হিফয করার তাওফীক হলো৷ দেশের বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া ও আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ উভয় বোর্ডে পরীক্ষা দিয়ে স্টারমার্ক ও মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করি, যা সম্পূর্ণই আল্লাহ তাআলার বিশেষ করুণা ও অনুগ্রহে ফসল ছাড়া কিছু নয়৷ হিফয শেষ করে আবারো ভর্তি হয়ে গেলাম পরবর্তী ক্লাসগুলো শেষ করার লক্ষে৷ আলহামদুলিল্লাহ! মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ক্লাস তাকমীল ফিল-হাদীসের পরীক্ষায়ও বোর্ডে স্টারমার্ক রেখে উত্তীর্ণ হলাম৷ ফালিল্লাহিল-হামদ্৷
.
তাকমীল ফিল-হাদীস অর্থাৎ ‘মাওলানা’ হওয়ার পরই আমার সম্বিৎ ফিরল৷ আমি যে এই ইলমে-দ্বীন শিখলাম, কুরআন-হাদীসের ইলম অর্জন করলাম, আমার মাথার মুকুট শ্রদ্ধাভাজন আসাতিযায়ে কেরাম মাঝেমধ্যেই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিতেন, কিন্তু দায়িত্ব আঞ্জামের প্র্যাক্টিক্যাল ময়দান সম্পর্কে অনবগত থাকায় বুঝে উঠতে পারি নি আসলেই আমার কাছে জাতি কী চায়?
.
পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় এবং অন্যান্য ভাই-বোনরাও লেখাপড়ায় থাকায় পরিবারের হাল ধরার তাকাযা সত্ত্বেও মা-বাবার সম্মতিতে আবারও ভর্তি হয়ে গেলাম ফিকহে ইসলামীর বিশেষ কোর্স ইফতা বিভাগে৷ দু’সালা ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করি৷ আলহামদুলিল্লাহ! তখন থেকেই জীবনের মাকসাদ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা পাই৷ দাওয়াতী কাজের প্রেরণা লাভ করি৷
.
দাওয়াত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয আমল, যার সঙ্গে এই জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন৷ দাওয়াত বন্ধ হয়ে গেলে এই জাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে৷ তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি দাওয়াহ’র কাজের প্ল্যান করতে থাকলাম৷ প্রথমেই অনলাইনভিত্তিক দ্বীনের উপর বিষয়ভিত্তিক লেখালেখির মাধ্যমে কাজ শুরু৷ আসলে আল্লাহ তাআলার পথে চললে আল্লাহ তাআলাই পথ প্রশস্ত করে দেন৷ কাজের ক্ষেত্র তৈরী করে দেন৷
.
এখন আলহামদুলিল্লাহ অফলাইনেও এমন কিছু দ্বীনি ভাইয়ের সন্ধান পেয়েছি, যারা সত্যি দ্বীনের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ৷ দ্বীন পালনে অন্তপ্রাণ৷ তারা নিজে যেমন হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মাধ্যমে দ্বীন থেকে দূরে অবস্থানরত অন্যান্য ভাইয়েরাও ধীরেধীরে হেদায়াত পাচ্ছেন৷ তাদের পেয়ে আমি নিজে খুবই গর্বিত৷ ইলমী পিপাসা মেটাতে এই অযোগ্য অধম কাজ করে গেলেও মসজিদ-মাদরাসার দায়িত্ব, নিজের অযোগ্যতা ও সময়-স্বল্পতার কারণে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে৷
.
তবুও আমি খুবই ইন্টারেস্টেড এই কারণে যে, দাওয়াতী মেহনতের এই বিশাল প্লাটফর্মটি একেবারেই শূন্য পড়ে আছে৷ কিছুটা হলেও এখানে সময় দিতে পারছি বলে আমি মোটামুটি তৃপ্ত হলেও চাহিদার তুলনায় কাজ একেবারে অপ্রতুল হওয়ায় মোটেও সন্তুষ্ট নই৷ এই প্লাটফর্মে তরুণ, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সরব পদচারণা ও মেহনত ফরয হয়ে আছে৷ অথচ আমরা নিজেদের গণ্ডির মধ্যে থাকাকেই যথেষ্ট মনে করছি৷
.
আজ আমি খুব অনুভব করছি দাওয়াতী কাজের কী পরিমাণ প্রয়োজন আমাদের মাঝে! আমাদেরই দ্বীনি ভাই-বোনেরা দ্বীন থেকে দূরে থাকার কারণে, গোনাহ করলে পরকালীন কী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, সেই বিষয়ে সম্যক অবগত না থাকার কারণে পার্কে, ভার্সিটি ও কলেজ ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে চলাফেরা করবে, সাময়িক সুখের জন্যে নিজের মূল্যবান চরিত্র ধ্বংস করে দিবে, নিজেরা গোনাহের কাজ করবে আর অন্যদেরকেও গোনাহের দিকে আহবান করবে আর আমরা এসব দেখে “নাউযুবিল্লাহ” “আসতাগফিরুল্লাহ” বলে চলে স্থান ত্যাগ করে চলে যাব, এটা কখনোই একজন দায়িত্বশীল মু’মিনের কাজ হতে পারে না৷
.
দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে যেভাবে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়, জমি পানির জন্যে হাহাকার করতে থাকে৷ বৃষ্টি হলেই যমীন সতেজ হয়ে যায়, তার মধ্যে উর্বরতা চলে আসে৷ ঠিক তদ্রূপ দাওয়াতী মেহনতের অভাবে, ইলমী বারি বর্ষণের অভাবে যুবসমাজ আজ জাহিলিয়াতের গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত৷ যুবসমাজকে বলা হয় ইসলামের প্রাণভোমরা৷
.
আসুন প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে উম্মাহর সম্পদ যুবসমাজের পেছনে দাওয়াতী মেহনতে লেগে যাই৷ এই যুবসমাজ যদি দ্বীনের পথে চলে আসে, তাহলে আবারও ইসলাম তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে৷ মুসলিম জাতি আবারও সগৌরবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে৷