
তাইওয়ানে ইসলাম!
সব মিলে তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা লক্ষাধিক। স্থানীয় মুসলমানদের বেশির ভাগ সামরিক বাহিনীতে এবং সরকারি চাকরি করছেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে যারা এখানে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই এখানকার ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলমানরা সর্বপ্রথম তাইওয়ানে বসতি স্থাপন করে। তাইওয়ানে ইসলামের আগমন ঘটে ১৯৪৯ সালের দিকে। তাইওয়ান মেনল্যান্ড চিন থেকে কয়েক হাজার মুসলমান এখানে এসে বসবাস শুরু করে। ১৯৮০ সালের দিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিপুলসংখ্যক মুসলমান তাইওয়ানে পাড়ি জমায়। এছাড়া ৮৮,৫০০ ইন্দোনেশীয় মুসলমান তাইওয়ানে কর্মরত রয়েছেন। সব মিলে তাইওয়ানে মুসলমানের সংখ্যা লক্ষাধিক। স্থানীয় মুসলমানদের বেশির ভাগ সামরিক বাহিনীতে এবং সরকারি চাকরি করছেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে যারা এখানে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই এখানকার ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
‘তাইওয়ান’ পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপ, যা চিনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। অতীতে পর্তুগিজরা এর নাম দিয়েছিল ‘ফরমোসা’, যার অর্থ ‘সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপ’। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ। বর্তমানে তাইওয়ানের অধিকাংশ মুসলমান নতুন ধর্মান্তরিত। ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা অধিক। তারা ইসলাম কবুল করে মুসলমানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাইওয়ানের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি। তবে মুসলিম সমাজে আলেমের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। উচ্চ পর্যাযের মাদরাসা না থাকায় পর্যাপ্ত আলেম তৈরি হচ্ছে না। ইসলামী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাইরে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কূটনৈতিক অঙ্গনে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন।
দাওয়াতি তৎপরতা জোরদার করার লক্ষ্যে রাবেতা আল আলম আল ইসলামী ও ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথের যৌথ উদ্যোগে মাঝে মধ্যে তরুণদের জন্য ক্যাম্প ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। চিনা মুসলিম এসোসিয়েশন তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংগঠন। স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে তাদের দীনি শিক্ষার স্বতন্ত্র কোনো প্রতিষ্ঠান তাইওয়ানে নেই। তবে তাদের শিশুরা রোববার ভোরে মক্তবে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে। চিনা মুসলিম এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য দু’মাস অন্তর অন্তর একটি পত্রিকাও বের হয়। তাইওয়ানে ধর্ম-কর্ম পালনের ব্যাপারে সরকারে পক্ষ থেকে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। গত কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান সরকার প্রতিবছর একটি হজ-কাফেলা পাঠায়।
পুরো তাইওয়ানে মসজিদ আছে ৬টি, গণপাঠাগার ৪টি এবং প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে একটি। তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদটি তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এ মসজিদে বছরে প্রায় ১০০ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদটি তাইওয়ানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনাও। আরবি ও পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি এ মসজিদে এক হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে তাইওয়ানে প্রয়োজনের তুলনায় মসজিদ কম থাকায় জুমার নামাজ আদায় করতে সমস্যা হয়। এছাড়া হালাল খাদ্য সবখানে বিক্রি না করার কারণে দৈনন্দিন জীবনে মুসলমানদের বিপাকে পড়তে হয়। মূলত যেসব দেশে মুসলমনার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বাস করছেন তাদের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইসলামের ওপর অটল থাকা এবং বিশ্বাসের ভিত শক্তিশালী রাখা অনেক বড় কৃতিত্ব।