
আল আকসা মসজিদের ইতিকথা ও যায়নবাদী ইহুদী – খ্রিষ্টানদের ষড়যন্ত্র
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
ফিলিস্তিনের প্রাণকেন্দ্র জেরুসালেম অসংখ্য নবী-রাসুলের ইসলামের দাওয়াহর কেন্দ্র ছিল বলে দুনিয়ার মুসলিমদের কাছে তা একটি অতি প্রিয় স্থান। এ পবিত্র শহরেই রয়েছে আল আকসা মসজিদ যা বিশ্ব মুসলিমের প্রথম কিবলা হিসেবে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। পবিত্র কাবা কিবলা হওয়ার আগে মুসলমানরা আল আকসা মসজিদের দিকে ১৭ মাস পর্যন্ত মুখ করে নামাজ আদায় করেছিলেন। আল আকসা মসজিদের পাশেই রয়েছে সাকরা বা পাথর, যেখান থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরু করেছিলেন মিরাজের রাতে আকাশমুখী সফর।
যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে ইবাদাতের নিয়াতে সফরের অনুমতি আছে তার মধ্যে একটি হল আল আকসা মসজিদে। বাকি ২টি হলো মসজিদে হারাম(মক্কা) ও মসজিদে নববী(মদিনা)
[বুখারী ১১৮৯; মুসলিম ১৩৯৭]
পবিত্র কুরআনে ২টি মসজিদের নাম উল্লিখিত হয়েছে। একটি মসজিদে হারাম(মক্কা) ও অপরটি মসজিদে আকসা।
আগে এর নাম ছিল “বাইতুল মাকদিস”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামি যুগ থেকে ওই মসজিদের নামকরণ করা হয় “মসজিদে আকসা”।
“আকসা” শব্দের অর্থ দূরবর্তী। সম্ভবত এটি মক্কা থেকে দূরে বলে মহান আল্লাহ্ একে কুরআনে “মসজিদুল আকসা” বলে অভিহিত করেন।
দুঃখের বিষয়, জেরুসালেম আজ ইহুদীদের হাতে। ইহুদীরা আল আকসা মসজিদ ও গম্বুজে সাখরা(Dome of rock) ধ্বংস করে সেখানে তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী নিজেদের কথিত ইবাদাতখানা ৩য় টেম্পল তথা “হাইকালে সুলাইমানি” বা সুলাইমান(আঃ) এর তৈরি ইবাদাতগৃহ নির্মাণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জেরুজালেম শহরের পরিচয়ঃ
মুসলমানদের কাছে জেরুসালেম শহর “আল কুদস” নামে পরিচিত। “কুদস” শব্দের অর্থ পবিত্র। “বাইতুল মাকদিস” অর্থ “হাইকালে সুলাইমানি” বা সুলাইমান(আঃ) এর তৈরি ইবাদাতগৃহ। “মাকদিস” শব্দের মূলেও “কুদস” শব্দ রয়েছে। মূলকথা হল এটি পবিত্র শহর। এই পবিত্র শহরেই প্রখ্যাত আল আকসা মসজিদ রয়েছে।
জেরুজালেম শহরে মুসলমান, ইহুদী, খ্রিষ্টানের ধর্মীয় উপাসনালয়ের কারণে এখানে বহু পর্যটক ও তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে। হযরত ইসা(আঃ)এর জন্মও এই জেরুসালেম শহরে। এখানে মসজিদে আকসা ব্যতীত আরও ৩৫ টি মসজিদ আছে।
পবিত্র কুরআনে জেরুসালেম শহরকে বরকতময় ও পবিত্র ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ্ বলেন,
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি,যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”[সূরা আল ইসরাঃ১]
এখানে মসজিদে আকসার চারদিক বলতে জেরুসালেম শহরকেই বুঝানো হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল কুদসের(জেরুসালেম) এমন কোন জায়গা খালি নেই যেখানে একজন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোন ফিরিশতা দাঁড়াননি।”[তিরমিজি]
আল আকসা মসজিদের নির্মাণ, সীমানা ও গুরুত্বঃ
আবু যার গিফারি(রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করি, যমীনে প্রথম কোন মসজিদে তৈরি হয়েছিল? তিনি উত্তরে বলেন,“মসজিদে হারাম”। আমি জিজ্ঞেস করি তারপর কোনটি? তিনি বলেন “মসজিদে আকসা”। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করি। এ দুটোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতো? তিনি বলেন। ৪০ বছর।
[বুখারি, মুসলিম]
অনেকে মনে করেন হযরত সুলাইমান(আঃ) মসজিদে আকসা তৈরি করেছেন, অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল। ইব্রাহীম(আঃ)ই প্রথম আল আকসা তৈরি করেন।ইব্রাহীম(আঃ) ও সুলাইমান(আঃ) এর সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ১ হাজার বছর। এবং উপরের সহিহ হাদিসে বলাই হয়েছে কাবার ৪০ বছর পরে আকসা তৈরি হয়েছে। ইবনুল যাওজী(র) বলেন, এই হাদিসে মসজিদে আকসার প্রথম ভিত্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইব্রাহীম(আঃ) যেমন কাবার প্রতিষ্ঠাতা নন, ঠিক তেমনি সুলাইমান(আ)ও মসজিদে আকসার প্রতিষ্ঠাতা নন। বরং উভয়েই পুনঃনির্মাণকারী। কাবার মূল প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন হযরত আদম(আ)। আর আল আকসার মূলপ্রতিষ্ঠাতা হলেন হযরত ইব্রাহিম(আ)।
হযরত ইব্রাহিম(আ) সাখরার স্থানে যে মসজিদে আকসা নির্মাণ করেন, তা দুর্বল হয়ে পরায় ইব্রাহিম(আ) এর নাতি ইয়াকুব(আ) তা পরবর্তীতে সংস্কার করেন।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১ম খন্ড]
ইব্রাহিম(আ) এর পর উনার ছেলে ইসমাইল(আঃ)ও ইসহাক(আঃ), তারপরে ইসহাক(আঃ) এর ছেলে ইয়াকুব(আঃ)। যার উপাধি ছিল ইসরাইল। তার বংশধরদের বনু ইসরাইল বলা হয়। তারপর ইয়াকুব(আঃ) এর ছেলে ইউসুফ(আঃ), তারপর মুসা(আ),তারপর ইউশা বিন নুন(আ), তারপর দাউদ(আ) এবং তারপর দাউদ(আ) এর ছেলে সুলাইমান(আঃ)দুনিয়াতে আগমন করেন। তিনিই মসজিদে আকসা পুনঃনির্মাণ করেন। এই মসজিদে নির্মানে ৩০হাজার শ্রমিকের ৭ বছর সময় লেগেছিল।
ইবনে তাইমিয়া(র) বলেন, হযরত ইব্রাহিম(আ) এর যুগেই মসজিদে আকসা তৈরি হয়েছিল, হযরত সুলাইমান(আ) তা বড় ও মজবুত করে তৈরি করেন।
[মাজমুউল ফাতাওয়া ১৭খন্ড, ৩৫১পৃঃ]
পরবর্তীতে বিভিন্ন যুদ্ধের সময় ব্যাবিলন, গ্রীক ও রোমানদের হাতে মাসজিদে আকসা ধ্বংস হয়।
পরবর্তীতে খলিফা উমার(রা) এর সময়ে আবার জেরুসালেম মুসলিমদের হাতে আসে। তিনি সাখরার(পাথর; যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজ শুরু করেছিলেন) সামনে মসজিদ নির্মাণ করেন এবং সাখরাকে মসজিদের পিছনে রাখেন। উল্লেখ্য যে, সেখানে তখন মসজিদে আকসা নামে কোন মসজিদ ছিল না। কুরআনে মসজিদে আকসা বলতে সিজদা ও ইবাদাতের জায়গার প্রতি ইঙ্গিত ও অদূর ভবিষ্যতে নির্মিতব্য মসজিদের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। মসজিদে সাখরা (Dome of rock)কে মসজিদে উমারও বলা হয়, কেননা উমার(রা)ই এটি তৈরি করেন।
পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান জেরুসালেম শহরের পুনর্গঠন করেন এবং ৬৮৫-৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে নতুন করে মসজিদে আকসা তৈরির জন্য মসজিদে আকসার বর্তমান দেয়ালঘেরা সকল অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেন। আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান মসজিদে আকসার পুরো সীমানার ভেতরে কালো গম্বুজ ও সোনালী গম্বুজের মসজিদ ২টি তৈরির উদ্যোগ নেন। তার ছেলে ওয়ালিদের আমলে মসজিদে আকসার নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সাধারণত বাম পাশের মসজিদটা আমাদের কাছে আল আকসাও ডান পাশের মসজিদটা Dome of rock বা মসজিদে সাখরা(পাথরের মসজিদ) নামে পরিচিত। কিন্তু আসলে উভয়েই আল আকসা মসজিদ। শুধুমাত্র নামের পার্থক্য। উভয় মসজিদই আল আকসার সীমানার মধ্যে পরবর্তীতে তৈরি করা হয়েছে।
লাল বর্ডার দেয়া পুরো অংশটিই আল আকসা মসজিদের অংশ যেখানে কালো গম্বুজ ও সোনালী গম্বুজের মসজিদ ২টি অবস্থিত।
জেরুসালেম শহর ১০৯৯ খৃঃ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০০ বছর মুসলমানদের অধীনে ছিল। আবার হাতছাড়া হয়। আবার সুলতান সালাউদ্দিন আয়্যুবি(র) এর হাতে জেরুসালেম মুসলিমদের হাতে আসে। পরবর্তীতে আবারও জেরুসালেম মুসলমানদের হাতছাড়া হয়।
জেরুসালেম ১৯৬৭ খৃঃ পর্যন্ত জর্ডানি শাসনে থাকে। ১৯৬৭ সালে বর্তমান ইজরাইল একযোগে মিসর, সিরিয়া ও জর্ডানের উপর আক্রমণ করে। ৬দিনের যুদ্ধে ইসরাইল, জর্ডানের মুসলিম শাসন থেকে জেরুসালেম দখল করে নেয়। যা এখন পর্যন্ত তাদের হাতে রয়েছে।
জেরুসালেম বিগত ১৪শ বছরের মধ্যে প্রায় ১ হাজার বছর মুসলমানদের শাসনাধীনে ছিল। মাত্র ২ বার ক্রুসেড ও সর্বশেষ ইহুদী শাসনে এই মুসলিম শহরটি নিষ্পেষিত হয়, যে অন্যায় শাসন এখনও বহাল আছে।
উলামায়ে কিরামের মতে আল আকসা বর্তমান মসজিদ ভবন ছাড়াও আরও বিরাট অংশের নাম। বরং ইসলামি শরিয়াতের দৃষ্টিতে বিভিন্ন গেইট বিশিষ্ট বড় দেয়ালের ভেতরের সবটুকু অংশই মসজিদে আকসা। মসজিদে আকসা মূলত ইবাদাতের একটি খালি স্থানের নাম। ঐ খালি স্থানের অংশ বিশেষের উপর পরবর্তীতে মসজিদে আকসা ও মসজিদে সাখরা (Domeof rock বা পাথরের মসজিদ) নির্মিত হয়েছে। বাকি অংশটুকু চারদিক থেকে দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত।
মসজিদে আকসা মসজিদে সাকরা থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত। মসজিদে সাখরা (Dome of rock বা পাথরের মসজিদ) এর মধ্যেই রয়েছে সেই পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজের রাতে আকাশমুখী ভ্রমন শুরু করেছিলেন।
মসজিদে আকসার কারণেই মূলত জেরুসালেম শহরের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম(আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত প্রায় অধিকাংশ নবী সেখানে ইবাদাত করেছেন।
হযরত আনাস(রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঘরে নামাজ পড়লে ১ গুণ, মসজিদে পড়লে ২৫গুন, জামে মসজিদে পড়লে ৫০০ গুন, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববীতে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদে হারামে পড়লে ১ লাখ গুণ সওয়াব পাওয়া যাবে।” [ইবনে মাজাহ]
ইহুদীবাদ ও যায়নবাদঃ
ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস, লক্ষ্য ও ষড়যন্ত্র জানতে হলে আমাদের ইহুদিবাদ ও যায়নবাদ কি তা বুঝতে হবে।
zionism হচ্ছে ইহুদিদের একটা রাজনৈতিক আন্দোলন।ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে বিকৃত তাওরাতে বলা promised land প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে আন্দোলন করে তাই হচ্ছে zionism। ইহুদীনেতা ও দার্শনিক থিওডর হার্জল ১৮৯৭ সালে ইহুদীদের এক সম্মেলনে এর রূপরেখা দেখায়। ফিলিস্তিন মুমিনদের জন্য,কাফিরদের জন্য নয়। কাজেই তাওরাতের ঐ promised land এর হকদার মুসলিমরা। শান্তিকামী অনেক ইহুদিও এভাবে মুসলিমদের মেরে কেটে কথিত promised land ছিনতাই এর বিপক্ষে, তারা এটাকে তাওরাতের আদেশ এর লঙ্ঘণ মনে করে।
Zionism এর উদ্দেশ্য হল তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত promised land এর এরিয়াকে নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসা। এবং old and new testament এ বর্ণিত ‘প্রমিসড রাজা’ (ইসলামে যে দাজ্জাল নামে পরিচিত) আসার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা, এজন্য তারা তাদের মতবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং বিশ্বের বড় বড় পর্যায়কে নিজেদের হাতে নিচ্ছে, শর্তমতে রাজা আগমনের পূর্বে তাদের কথিত টেম্পল তৈরি করা।যা তৈরির জন্য অলরেডি প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
যায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদী হওয়া শর্ত নয়। অনেক উগ্র খ্রিষ্টানও যায়ন মতবাদে বিশ্বাসী।
Judaism হচ্ছে মূল ইহুদী ধর্ম, যেখানে ঈসা(আঃ)এর আগমনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু ইহুদীরা তাকে মেনে নেয় নি। এরপর মুহাম্মদ(সাঃ) কেও মেনে নেয় নি। প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের ত্রানকর্তার ভুল ব্যাখ্যা করে গোমরাহিতে পতিত হয়েছে। ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী ত্রানকর্তা এসে সারা বিশ্বে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে কিন্তু তাদের ভুলব্যাখ্যার জন্য ‘দাজ্জাল’ হবে তাদের চোখে মাসীহ(ত্রাণকর্তা)।
মার্কিন মিশনারি ওয়েন বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ইসরাইল রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জেরুসালেমকে এর রাজধানী করার পর শুধুমাত্র হাইকাল তথা ৩য় টেম্পল পুনঃনির্মাণ বাকি আছে। এর ফলে মাসীহ(আঃ)এর আগমন ঘটবে। ইহুদীরা খ্রিষ্টানদের সহযোগিতায় মসজিদে আকসা ভেঙ্গে সেখানে তাদের কথিত ৩য় টেম্পল তৈরি করবে। ইহুদী সন্ত্রাসবাদীরা মুসলমানদের পবিত্র স্থানকে উড়িয়ে দিবে এবং ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মুসলমানদেরকে উসকানি দিবে। এর ফলে মাসীহ আসবেন এবং তাতে হস্তক্ষেপ করবেন। আমরা বিশ্বাস করি যে ৩য় টেম্পল নির্মিত হওয়া উচিত।” [source: Prophecy & Politicsby grace halsell,USA]
Third temple has begun built শিরোনামে এই ভিডিওটি দেখুন।
https://www.youtube.com/watch?v=sIoBxrza7SU
নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেও জেরুসালেম ও আল আকসার প্রকৃত উত্তরাধিকারী হল মুসলিমরা। কেননা ইহুদীরা যাদের অনুসারী বলে দাবি করে সেই দাউদ(আঃ) ও সুলাইমান(আ)এর আনীত দ্বীনের উপর তারা ছিল না, বরং তারা ইসলামের সম্মানিত নবী ছিলেন। নবী মুসা(আ) এর মাধ্যমে ইহুদীদের উপর অবতীর্ণ আসমানি কিতাব তাওরাত(যা বর্তমানে বিকৃত) তূর পাহাড়ে নাযিল হলেও তিনি ফিলিস্তিনে বাস করেননি এবং ইহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সম্ভবও হয়নি। তাই জেরুসালেম, তাওরাত বা ইহুদীদের ভূমি সংক্রান্ত ইসরাইলী দাবি অর্থহীন। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জেরুসালেম তথা বাইতুল মাকদিস থেকে মিরাজে যাওয়ার কারণে এবং পূর্ববর্তী অসংখ্য নবী রাসুলের ইবাদাতের কেন্দ্র হওয়ার কারণে তা ইসলামেরই পবিত্র স্থান ও পুন্যভূমি।
এখানেএকটি বিষয় লক্ষণীয় যে খ্রিষ্টানরাও মাসীহের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই যে এই মাসীহ হবেন আমাদের মুসলিমদের মাসীহ ঈসা(আঃ)। যিনি খ্রিষ্টান ও ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। যা ইসলামে “মালহামা” তথা ভয়ঙ্কর বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত এবং খ্রিষ্টানদের কাছে “আরমাগেড্ডন”নামে পরিচিত।
চূড়ান্ত কথাঃ
ইহুদী ও খৃষ্টানরা যতই শক্তির প্রদর্শনী দেখাক না কেন, আল আকসাকে ভেঙ্গে তাদের টেম্পল নির্মাণ করুক না কেন তাদের পরাজয় অতি নিকটে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই উম্মাহকে শেষ জামানায় সারা দুনিয়ায় বিজয়ের ওয়াদা দিয়েছেন, যে বিজয়ের শুরু অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। যা আমাদের সামনে এখন দৃশ্যমান।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান তথা বর্তমান আফগানিস্থানসহ আশেপাশের অঞ্চল) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (জেরুসালেম) উত্তোলন করা হবে (খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)”।
(সুনানে তিরমিজি,হাদিস নং ২২৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০)
আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদির খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে”।
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬;সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৪০৮৮)
খুরাসান থেকে বের হওয়া তালেবান, আল কায়েদাসহ সারা দুনিয়ার কালোপতাকাধারী “হকপন্থী” মুজাহিদিনরা আজ একের পর এক প্রদেশ জয় করে জেরুসালেম জয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ্। হইতও খুব বেশিদিন দূরে নেই ইমাম মাহদি (আঃ) এর আবির্ভাবের। হইত উনার জন্মই হয়ে গেছে, আত্মপ্রকাশের জন্য শুধু অপেক্ষা মহান আল্লাহ্র হুকুমের। হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী মুসলিম ভুখন্ডগুলোর বর্তমান অবস্থা ইমাম মাহদি(আঃ)এর আগমনের সকল শর্তই প্রায় পূরণ করে ফেলেছে। আল্লাহু আ’লাম। এরপর দাজ্জালের আগমন হবে। তাকে হত্যা করতে আসবেন আমাদের মাসীহ তথা ঈসা(আঃ)। এভাবে সারা দুনিয়াতে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে। তারপর কিয়ামতের দিকে আসতে আসতে এগিয়ে যাবে এই দুনিয়া।
মহান আল্লাহ্ মুসলিম উম্মাহকে ঐক্য দান করুন এবং পরস্পরের মধ্যে কাঁদা ছুড়াছুড়ি বন্ধ করে কুফফার শক্তিরবিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসূত্রঃ আল আকসা মাসজিদের ইতিকথা।
লেখকঃ এ. এন. এম. সিরাজুল ইসলাম
বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার থেকে প্রকাশিত।
তালেবান, আলকায়দা এরা কি কোরান পড়ে? পড়লে বোমা , গুলি এসব ব্যাবহার করতো না ও মুসলিম , বিধর্মীদের মারতো না।