
দাওয়াত ও তাবলীগ না করার ভয়াবহ পরিণতি
দাওয়াত ও তাবলীগ না করার ভয়াবহ পরিণতি
গত পর্বে আমরা দাওয়াত তাবলীগের গুরুত্ব ও ফাযীলাত সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা আলোচনা করবো দাওয়াত ও তাবলীগ না করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে।
দাওয়াত ও তাবলীগ না করার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার কুরআনের উদ্ধৃতি:
দাওয়াত ও তাবলীগ করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নাবী (সা) কে আদেশ দেন। সেই সাথে তা পালন না করার পরিণাম সম্পর্কে হুশিয়ার করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
۞ يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ
অনুবাদ : “হে রসূল ! আপনি পৌছে দিন যা আপনার রব-এর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যদি পৌছে না দেন, তাহলে আপনি আপনার রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন না। ( সূরাহ আল-মায়িদাহ, আয়াত নং-৬৭)।
এছাড়াও আল্লাহর দিকে দাওয়াত না দিলে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন বলে নাবী (সা)-কে হুশিয়ার করা হয়েছে।
وَادْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ [٢٨:٨٧]
অনুবাদ: আপনি আপনার রব-এর দিকে আহবান করুন আর আপনি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না। ( সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত নং-৮৭)।
অন্য আয়াতে এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ [١٢:١٠٨]
অনুবাদ : “আপনি বলুন! এটাই আমার পথ যে পথে আমি ও আমার অনুসারীগণ জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আল্লাহর পথে আহবান করি, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি ; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই।( সূরা ইউসূফ, আয়াত নং-১০৮)।
দা’ওয়াতের মূল কাজই হচ্ছে মানুষকে সত ও ভালো পথে আহবান করা, আর অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা। কিন্তু কেউ যদি এই প্রধান কাজগুলো পালন না করে তাহলে তাদের প্রতি আল্লাহর আযাব বলে আসা নিশ্চিত। সত কাজের আদেশ দেয়া ও অসত কাজের নিষেধ করা প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ [٥:٧٨]
كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ [٥:٧٩]
অনুবাদ : ‘বানী ঈসরাঈলদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে দাউদ ও মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ)-এর মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করেছিল। তারা পরষ্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করতো না, তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল। (সূরাহ আল-মায়িদাহ, আয়াত নং-৭৮-৭৯)।
জারীর ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, ‘যদি ক্বাওমের কোন ব্যক্তি পাপ কাজে লিপ্ত হয় এবং ক্বাওমের লোকেরা তাকে বারণ করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বারণ না করে তবে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তাদেরকে আযাবে নিপতিত করবেন। ( মিশকাত হা/৪৯১৬)।
অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত লোকদের বিরুদ্ধে হাক্বপন্থীদের অবশ্যই সোচ্চার হতে হবে। নতুবা অন্যায়কারীর মতো তাদের পরিণতিও করুন হবে।
কেননা অপর একটি হাদীসে জাবির (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল (আ:)-কে বললেন, অমুক শহরকে তার বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও। তখন জিবরাঈল (আ) বললেন, হে প্রভু! তাদের মধ্যে আপনার অমুক বান্দাটি আছে যে জীবনে একটি পলকের জন্যও আপনার নাফরমানি করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, : অত:পর আল্লাহ ইরশাদ করলেন যে, শহরটিকে ঐ ব্যক্তিসহ ঐ লোকদের উপর উল্টিয়ে দাও। কেননা মূহুর্তের জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারা এসব দুর্ষ্কমের কারণে পরিবর্তিত হয় নি। ( মিশকাত, হা/৪৯২৫)।
বানী ইসরাঈল সম্প্রদায় মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত কিন্তু অসত কাজে নিষেধ করতো না, যার দরুন তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব নেমে আসে।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ অনুষ্ঠিত হতে দেখে, সে যেন তার হাত দ্বারা প্রতিহত করে, আর যদি সে শক্তি তার না থাকে তাহলে সে যেন মুখের কথার দ্বারা তা বন্ধ করে। যদি মৌখিকত বারণ করতেও অপারগ হয় তাহলে সে যেন অন্তরে উক্ত কাজকে ঘৃণা করে। আর এটাই হলো ঈমানের দুর্বলতম লক্ষণ। (মুসলিম, হা/৮৫)।
এ সম্পর্কে হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, সে মহান আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই সত কাজের আদেশ করবে এবং আর অসত ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন: আর তোমরা আল্লাহর কাছে দুআ করবে কিন্তু তখন তোমাদের দু’আ কবূল করা হবে না।( তিরযিমী, মিশকাত হা/৪৯১১)।
আল্লাহ আমাদের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ প্রত্যেককে সাধ্যমতো পালন করার তাওফিক দিন।