
সূরা কাহাফ এর ফযীলত সম্পর্কিত সহীহ ও যইফ হাদীস
সূরা কাহাফ এর ফযীলত সম্পর্কিত সহীহ ও যইফ হাদীস
-লেখক: শাহাদাত হুসাইন
সম্পাদনা : সম্পাদনা পরিষদ
সূরা কাহাফের ফযীলত সম্পর্কে যেসব হাদীস এসেছে সেগুলো মূলত দাজ্জাল থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে । বিশেষ করে প্রথম দশটি আয়াত পাঠের মাধ্যমে দাজ্জালে ফিতনাহ হতে মুক্তি পাওয়ার। এছাড়া এ সূরাটি আরও একটি বিষয়ে গুরুত্ব হলো এ সূরায় গুহাবাসীর বর্ণনা রয়েছে।
সুরা কাহাফ দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ রাখে। এ বিষয়ে হাদীসগুলো হচ্ছে :
আবুদ দারদা (রা) হতে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা আল-কাহাফের প্রথম দশ আয়াত পাঠ করবে তাকে দাজ্জালে ফিত্বনাহ হতে নিরাপদ রাখা হবে। – হাদীস সহীহ, সহীহ মুসলিম ।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সুরায়ে কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হয়। ( তাফসীর ইবন কাসীর, ১৪খন্ড,১ম পৃষ্ঠা )
এছাড়ার তিরমিযীতে তিনটি আয়াতে বর্ণনা রয়েছে। এ হাদীস সম্পর্কে আলোচনা নিচে আসছে।
সুনান নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের সঠিক মত হচ্ছে প্রথম দশটি আয়াত সম্পর্কিত বর্ণনাই অধিক সঠিক ও যুক্তিযুক্ত।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। নাবী (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি জুমু’আহর দিনে সূরাহ কাহাফ পাঠ করবে, তার ঈমানের নূর এক জুম’আহ হতে আরেক জুমু’আহ পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হতে থাকবে। – হাদীস সহীহ। বায়হাক্বীর ‘সুগরা’ হা/৬৩৫ এবং ‘কুবরা’ হা/৫৭৯২, সহীহ আত-তারগীব হা/৭৩৬।
অপর হাদীসে এসেছে,
বারাআ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক লোক সূরা আল-কাহাফ পাঠ করছিলো। হঠাত সে দেখলো, তার পশু লাফাচ্ছে। সে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেঘমালা বা ছায়ার মতো কিছু দেখতে পেল। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে গিয়ে ঘটনাটি বললো। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এটা হলো বিশেষ প্রশান্তি, যা কুরআনের সাথে বা কুরআনের উপর নাযিল হয়েছে। – হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী হা/৪৬২৫, তিরমিযী, মুসলিম হা/১৮৯২।
উক্ত সাহাবী ছিলেন হযরত উসায়েদ ইবনু হুযায়ের (রা)। ( তাফসীর ইবন কাসীর, ১৪খন্ড,১ম পৃষ্ঠা )
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : “যে ব্যক্তি সূরাহ কাহাফ পাঠ করলো যেভাবে তা নাযিল হয়েছে ঠিক সেভাবে, এটি তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন নূর হবে তার স্থান হতে মাক্বাহ পর্যন্ত। – হাকিম। ইমাম হাকিম বলেন : মুসলিমের শর্তে সহীহ। আলবানী একে সহীহ লিগাইরিহি বলেছেন। সহীহ আত-তারগীব হা/১৪৭৩।
সূরা কাহাফের ফযীলত সম্পর্কে এসব সহীহ হাদীস ছাড়াও কিছু যইফ ও জাল হাদীস রয়েছে । সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এগুলো :
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি সুরা’র সন্ধান দিবো না, যার মাহাত্ম আকাশ ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে রয়েছে এবং তার পাঠকের জন্যও রয়েছে অনুরূপ পুরষ্কার ? যে তা পাঠ করবে তার এক জুমু’আহ হতে আরেক জুমু’আহর মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া গুনাহ মাফ করা হবে, উপরন্তু অতিরিক্ত আরো তিনদিনের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তারা বললো, হ্যাঁ আপনি বলুন। তিনি বললেন, তা হলো সুরা কাহাফ। – দায়লামী।
– হাদীসটি খুবই দুর্বল। ( সিলসিলাহ যইফাহ হা/১৩৩৬)।
যে ব্যক্তি জুমু’আহর দিন সূরাহ পাঠ করবে, সে আট দিন পর্যন্ত প্রত্যেক এমন ফিতনাহ হতে নিরাপদ থাকবে যা সামনে ঘটবে। এতে যদি দাজ্জাল আবির্ভূত হয় সে তার থেকেও নিরাপদ থাকবে।
– হাদীসটি খুবই দুর্বল। এর সানাদে রয়েছে ইবরাহীম মুখায়রামী। ইমাম দারা কুতনী বলেন, সে নির্ভরযোগ্য নয়। সে বিশ্বস্তদের সূত্রে বাতিল হাদীস বর্ণনা করে। বিস্তারিত দেখুন, সিলসিলা হ যইফাহ হা/১৩৩৬।
অপর একটি হাদীস হলো ,
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি সূরাহ কাহাফের প্রথম তিনটি আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদ থাকবে। (তিরমিযী)।
– হাদীসটি শায। আলবানী বলেন, উপরোক্তে শব্দে হাদীসটি শায। কিন্তু ভিন্ন শব্দে হাদীসটি সহীহ। এতে তিন আয়াত কথাটি ভুল। সঠিক হলো দশ আয়াত। দেখুন সিলসিলাহ যইফাহ হা/১৩৩৬।
ইবনু মীরদুওয়াই (রহ) বর্ণনা করেছেন যে, জুমুআ’হর দিন যে ব্যক্তি সূরায়ে কাহাফ পাঠ করবে সে তার পায়ের নীচ থেকে নিয়ে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর লাভ করবে। ওটা কিয়ামতের দিন খুবই উজ্জ্বল হবে এবং পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
হাদীসটির সনদ গারীব বা দুর্বল। ( তাফসীর ইবন কাসীর, ১৪খন্ড,১ম পৃষ্ঠা )
সূরা কাহাফের শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে এ পোস্ট দেখুন।
ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য সূরা সম্পর্কেও হাদীসগুলো পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।