
আমার সূদহীন অর্থনীতি
আমি যে পরিবারের সন্তান, সেটা আর্থিক ভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত বলা যায়না। দুঃস্থই বলাচলে। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসার আমার আব্বার। সেখান থেকেই আল্লাহ আমাকে আমার আব্বার হাত দিয়ে আজকের এই পজিসনে নিয়ে এসেছেন। আল হামদুলিল্লাহ।
অনেক আর্থিক পিছুটান তাই আজও আমার রয়েগেছে। বর্তমানে আমি একটি সরকারি ফ্ল্যাটে আছি। সরকারি ভবন মানে বুঝতেই পারছেন তার মেইন্টেনেন্স কি পর্যায়ের! আমার গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব যা, তাতে ডেইলি জার্নি সম্ভবপর নয়। অগত্যা মন্দের ভালো ফ্ল্যাটই সম্বল। মোটকথা আমার একটা ঘর দরকার। আর দশটা লোকের মত আমারো শখ আছে একটি ভালো ঘরের, একটি গাড়ির।
গাড়ি প্রসঙ্গে বলা ভালো। শহুরে জীবনে গাড়ি খুবই জরুরি, বিশেষ করে আপনার যদি একটি কন্যা সন্তান থাকে। রাস্তাঘাট বা পাবলিক ভেইকলগুলিতে কেবল তারাই ভ্রমণ করতে পারবে যাদের নিতান্ত মজবুরি, নতুবা বেলজ্জাটে। আর্থিক সুস্থতা সম্পন্ন ভদ্র লোকের ক্ষেত্রে শহুরে বা মফস্বলীয় রাস্তাঘাটে গাড়ি বিহীন চলাফেরা সত্যি কষ্টকর। যাইহোক, আমার ইচ্ছাও আছে প্রয়োজনও আছে। কিন্তু উপায়? হ্যাঁ, তাও আছে, সেটি হচ্ছে দু’টি। প্রথমটি খুবই সহজ। আমি যা বেতন পাই, এবং সরকারী কর্মী হবার সুবাদে খুব সহজেই কার লোন বা হোম লোন পেয়ে যাবো। সত্যি বলতে ইন্সটলমেন্ট পে করতে আমার খুব একটা কষ্টও হবেনা। কিন্তু এ পদ্ধতিতে এগোনো আমার পক্ষে অসম্ভব।
কারণ, এই প্রচলিত পথে রয়েছে সুদের মত বিষাক্ত কাঁটা। একজন মুসলিম হিসাবে আমি আমার আর্থিক জীবনও ইসলামের দায়রার মধ্যে কাটাতে চাই। তাই, আর যাইহোক অন্তত সুদের সাথে সম্পৃক্ততা রাখতে চাইনা। আমার চাওয়া না চাওয়াতে কিছু যায় আসেনা। কারণ, নিষেধাজ্ঞাটি আল্লাহ্র, যেখানে আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কোন এখতিয়ার নেই। তাই এ পদ্ধতিটি আমি খুব সহজেই ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছি। অনুতাপ, আফসোস তো নেইই বরং রয়েছে দীর্ঘশ্বাসের সাথে একটি স্বস্তিময় কৃতজ্ঞতা আদায়কারী শব্দ ‘আল হামদুলিল্লাহ’।
আমি পেরেছি, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সা)এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে। পেরেছি, প্রতিটি দিরহামের বদলে ৩৬ বার জিনার গুনাহ হতে নিজেকে পরিত্রান করতে। পেরেছে, নিজের মায়ের সাথে যিনার মত ঘৃণ্য পাপ হতে নিজেকে যোজন দূরত্বে নিয়ে যেতে। আমি আর্থিক ভাবে তাই সুস্থ। যদি টাকা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে, চিটফান্ডের দারস্থ হবার আমার প্রয়োজন পড়বেনা। সাদকা করবো, আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবো। দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোটেনা যাদের, তাদের অন্ন বাসস্থানের সুযোগ করে দেব। অসহায় রুগীদের চিকিৎসা বা দরিদ্র সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করবো।
তাতেই বাড়বে আমার সম্পদ- দুনিয়াতেও এবং আখিরাতেও। আহ! কতইনা ভাগ্যবান আমি। আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ বর্ধনের এই কৌশল প্রাপ্তিতে আমি ধন্য। তবে প্রবৃত্তির দাস ও দুনিয়াপুজারী কিছু নামধারি মুসলিম আমাকে তিরষ্কার করতেও ছাড়েনা। তারা বলে, তুমি কোনদিন বাড়ি গাড়ি করতে পারবেনা। আমি বলি- বিনা সুদে যদি এগুলি করতে পারি, তাহলে ভাববো এগুলি আমার প্রয়োজন ছিল, তাই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। যদি না পারি, ভাববো, এগুলির কোন প্রয়োজন আমার ছিলনা। তাই আল্লাহ আমাকে দিলেন না। আমার প্রয়োজন কি তা, আমার চাইতে আমার প্রতিপালক বেশি জানেন।
অতএব, কোনই আক্ষেপ নেই, কোনই দুঃখ নেই। বরং পাওনা না পাওয়ার বিষয়ে এই যে আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার সম্পদ আমি সেই রহমানের নিকট হতে প্রাপ্ত হয়েছি, তারই বিনিময়ে আমি পাবো জান্নাতের বেশুমার নিয়ামত। ক্ষনিকের এই দুনিয়ার যাবতীয় সম্পত্তিও তার সমকক্ষ নয়। তারা বলে, রিটায়ারের পরে কী করবি? আমি বলি গাছ তলায় থাকাই যদি তাকদীর হয়, ইনশাআল্লাহ্ কোন অসুবিধা নেই।
আমি জানি একটি ইট সোনা আর একটি ইট রূপা দিয়ে তৈরী জান্নাতি বাসভবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। পোড়া ইটের তৈরী ঘর তাই আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনা। যার সামনে রয়েছে সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর শান্তির নীড় জান্নাতের হাতছানি, সে কিভাবে সুদের সাথে নিজেকে জড়ায়? তাই আমি মুসলিম হিসাবে দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলাম।
আর তা হল এই যে, আল্লাহ যেভাবে রুজি দিয়েছেন, যতটুকু দিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট আমি। আল্লাহ প্রদত্ত এই রুজিতে হালাল উপায়ে যতটুকু আমি করতে পারবো ভাববো সেটাই আমার আল্লাহ নির্ধারিত প্রয়োজন। হালাল রুজির আয়ত্তের বাইরে যা কিছুই থাকবে সবই আমার জন্য অপ্রয়োজনীয়। এতেই আমি সুখ পাই, জান্নাতি সুখ। আপনিও চেখে দেখতে পারেন। পিস অব মাইন্ড গ্যারান্টীড।
-সংগৃহীত