রমজানের দিনের বেলায় মিসওয়াক ব্যবহার করার হুকুম

প্রশ্ন: রমজানের দিনের বেলায় মিসওয়াক ব্যবহার করার হুকুম কী? মিসওয়াকের থুথু গিলে ফেলা কি জায়েয আছে?
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
রোজাকালে ও রোজা ছাড়া, দিবসের প্রথমভাগে অথবা শেষভাগে সবসময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। দলিল হচ্ছে-
১- ইমাম বুখারি (নং ৮৮৭) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।”
২- ইমাম নাসাঈ, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মিসওয়াক হচ্ছে- মুখ পবিত্রকারী ও রব্বকে সন্তুষ্টকারী”[নাসাঈ (৫), আলবানী সহিহ নাসাঈ গ্রন্থে (৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

এ হাদিসগুলোত সবসময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে দলিল পাওয়া যায়। এ বিধান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারকে বাদ দেননি। বরং হাদিসগুলো রোজাদার ও রোজাদার নয় এমন সকলকে শামিল করে।

মিসওয়াক করার পর থুথু গিলে ফেলা জায়েয। তবে যদি মিসওয়াকের কোন কিছু ছুটে মুখে থাকে তাহলে সেটা ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলবে। যেমন রোজাদারের জন্য ওজু করা জায়েয। ওজুর পানি মুখ থেকে ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলা জায়েয। কুলির পানি মুখ থেকে শুকিয়ে ফেলা আবশ্যকীয় নয়।

ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ (৬/৩২৭) কিতাবে বলেন:

মুতাওয়াল্লি ও অন্যান্যরা বলেন: “রোজাদার কুলি করার পর কুলির পানি ফেলে দেয়া অপরিহার্য। কোন কাপড় বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে মুখ শুকানো অপরিহার্য নয়- এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই।” সমাপ্ত

ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন:

রোজাদার কর্তৃক কাঁচা ও শুকনো মিসওয়াক ব্যবহার করা শীর্ষক অধ্যায়… আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কঠিন মনে না করতাম তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক ওজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” বুখারি বলেন: “এ বিধান থেকে রোজাদারকে বাদ দেয়া হয়নি”। আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “মিসওয়াক হচ্ছে- মুখ পবিত্রকারী ও রব্বকে সন্তুষ্টকারী” আতা ও কাতাদা বলেন: “তার থুথু সে গিলে ফেলবে।”

ইবনে হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন:

“এ শিরোনামের মাধ্যমে তিনি যারা রোজাদারের জন্য কাঁচা মিসওয়াক করাকে মাকরুহ মনে করেন ইঙ্গিতে তাদের মতের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন।”

এক্ষেত্রে তিনি রোজাদারকে অন্য কারো থেকে আলাদা করেননি। যেমনিভাবে কাঁচা মিসওয়াক থেকে শুকনো মিসওয়াককে আলাদা করেননি। শিরোনামকে এভাবে গ্রহণ করলে এ শিরোনামের অধীনে যে কয়টি হাদিস উল্লেখ করেছেন সবগুলোর সাথে শিরোনামের সামঞ্জস্যতা ফুটে উঠে। আর এ সবগুলো বিধানকে অন্তর্ভুক্তকারী বাণীটি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে- “তিনি তাদেরকে প্রত্যেক ওজুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন।” এ কথাটির দাবী হচ্ছে- প্রত্যেক সময় ও প্রত্যেক অবস্থায় মিসওয়াক করা জায়েয।

আতা ও কাতাদা বলেন: “থুথু গিলে ফেলবে”

শিরোনামের সাথে এ উক্তিটির সামঞ্জস্য হলো- সর্বোচ্চ যে ভয়টি হতে পারে সেটা হচ্ছে- মিসওয়াকের কিছু মুখে মিশে যাওয়া। এ মিশে যাওয়া জিনিশটি কুলির পানির মত। যদি সেটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে থুথু গিলে ফেলে তাতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।[ইবনে হাজারের বক্তব্য সংক্ষেপে সমাপ্ত]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

সঠিক মতানুযায়ী দিবসের প্রথমভাগে হোক বা শেষভাগে হোক রোজাদারের জন্য মিসওয়াক করা সুন্নত।[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৪৬৮]

মিসওয়াক কাঁচা হলেও দিনের যে কোন সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। যদি রোজাদার মিসওয়াক করে এবং মিসওয়াককালে ঝাঁঝ অনুভব করে বা এ জাতীয় কোন স্বাদ অনুভব করে এবং সেটা গিলে ফেলে অথবা থুথুসহ মুখ থেকে মিসওয়াক বের করে আবার মুখে দেয় এবং থুথু গিলে ফেলে এতে করে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।[আল-ফাতাওয়া আল-সাদিয়া, পৃষ্ঠা- ২৪৫]

মিসওয়াকের মধ্যে থুথুর সাথে মিশে যায় এমন কোন পদার্থ থাকলে এ জাতীয় মিসওয়াক পরিহার করবে; যেমন- “সবুজ মিসওয়াক”। অনুরূপভাবে মিসওয়াক তৈরীতে যদি লেবু বা পুদিনা পাতার ফ্লেবার ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটাও পরিহার করবে। আর মুখের ভেতরে মিসওয়াকের ছেঁড়া অংশ ঢুকে গেলে সেগুলো ফেলে দিবে। ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু গিলে ফেলা নাজায়েয। অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু পেটে ঢুকে গেলে কোন ক্ষতি নেই”।[সাবউনা মাসয়ালা ফিস সিয়াম]

আল্লাহই ভাল জানেন।
সুত্রঃ ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button