সাকরাইন মুসলিমদের উৎসব নয়

সাকরাইন মুসলিমদের উৎসব নয়

রচনায়ঃ হাশিম বিন আব্দুল হাকীম

সাকরাইনের ইতিহাস : পৌষ সংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি বলে যে উৎসব দক্ষিণ এশিয়ায় পালিত হয় তারই ঢাকাইয়া নাম সাকরাইন। ভাতে পৌষ সংক্রান্তি নামেই, নেপালে এটা পরিচিত মাথী নামে, থাইল্যান্ডেয সংক্রান্, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে পরিচিত। মকরসংক্রান্তি হলো সেই ক্ষণ যাকে ঘিরে এ উৎসব পালিত হয়।

মকর সংক্রান্তি কী? এর উৎপত্তি বা ইতিহাসটাই বা কী? প্রাচীনকাল থেকেই এ উৎসব চলে আসছে। তবে সুষ্পষ্টভাবে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। হতে পারে এটা হাজার বছরের উৎসব বা তারও আগের।

পুরাণের মধ্যেও এর উল্লেখ আছে। যার মধ্যে আমরা উত্তর পেয়ে যাই। পুরাণ অনুযায়ী, মকর সংক্রান্তির এ মহাতিথিতেই মহাভারতের পতামহ ভীস্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্ৰহণ করেছিলেন। আবার অন্য মত অনুযায়ী, এ দিনই দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। বিষ্ণুদেব অসুরদের বধ করে তাদের কাটা মুণ্ড মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন। তাই মকর সংক্রান্তির দিনই সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাস হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে আজও মানা হয়ে থাকে। রাশির দেবতা শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা ছেলের সম্পর্কে একটি বিশেষ দিন হিসাবেও ধরা হয়।

আসুন দেখি বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্যের গতি দুই প্রকার। উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ। ২১ ডিসেম্বর সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণে প্ৰবেশ করে। এদিন রাত সব থেকে বড় হয় আর দিন সব থেকে ছোট হয়। এরপর থেকে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু করে। মাঘ থেকে আষাঢ় পৰ্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ। আবার শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত হয় মাস দক্ষিণায়ণ। পৌষ মাসের সংক্রান্তিকেই বলা হয় উত্তর সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। শাস্ত্ৰ মতে, উত্তরায়ণে মৃত্যু হলে মুক্তি প্ৰাপ্তি হয় এবং দক্ষিণায়ণে মৃত্যু হলে ঘটে পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ- তাকে আবার সংসারে ফিরে আসতে হয়। সূর্য এ দিনই ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্ৰবেশ করে। এর থেকেই মকর সংক্রান্তির উৎপত্তি।

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরদ্বীপে প্ৰতি বছরই মকর সংক্রান্তিতে স্নানে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাবেশ হয়। ঢাকায় চলে পূজা ও প্রার্থনা। চলে পিঠে উৎসব ও পিঠে বানিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। মিষ্টি, লাড্ডু তো আছেই। চলে ঘুড়ি উৎসব। ঘুড়িতে করে দেবতার কাছে বার্তা পাঠানো যাবে, ঘুড়ি উৎসবটা এসেছে মূলতঃ এই চিন্তা থেকেই। মৌলভীবাজারের মতো কোথাও কোথাও চলে রাতভর মাছের মেলা। সাকরাইন মূলতঃ হিন্দু লোকউৎসব হলেও এখন এ দিনটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পালন করে।

পুরাণ ঢাকার সাকরাইন : পুরাণ ঢাকায় সাকরাইন পহেলা মাঘে পালন হয়। তাই ১৪ জানুয়ারি এ উৎসব পালন করার কথা। তবে শাঁখারিবাজারের আদি হিন্দু পরিবারগুলো ১৫ জানুয়ারিকে পহেলা মাঘ মেনে এ উৎসব পালন করে। এদিন পুরাণ ঢাকার আকাশ ঘুড়িতে ঢেকে যায়। সন্ধ্যায় মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনে ফুঁ দিয়ে আকাশে অগ্নিকুণ্ড তৈরি, ফানুস উড়ানো অথবা আতশবাজিতে মুখর থাকে আকাশ। সাকরাইনের সপ্তাহ খানিক আগে থেকে চলে প্ৰস্তুতি। সুতোয় কাঁচ, রঙ দিয়ে ‘মাঞ্জা’ দেয়া হয়। শাঁখারিবাজারের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন আকার, আকৃতির ঘুড়ি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বানিয়ে নেন ঢাউস ‘ল্যাঞ্জার’ ঘুড়ি। ঘুড়ির লেজকে পুরাণ ঢাকায় বলে ল্যাঞ্জা। ছাদে ছাদে বন্ধুবান্ধবের দল টাকা তুলে এসব আয়োজন করে। লাখ লাখ টাকার বাহারি আতশবাজি ফোটানো হয় সাকরাইনকে কেন্দ্ৰ করে। সাকরাইনের আগ থেকেই অনেক পর্যটক ভিড় জমায় এখানে। নতুন ঢাকাসহ নানান এলাকা থেকে মানুষ আসে পুরাণ ঢাকায়।

সাকরাইনে স্থানীয় দোকানগুলোতে বেচাকেনা ভাল হয়। লাভবান হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা। তবে পুরান ঢাকার অধিকাংশ ছাদে রেলিং না থাকায় প্রতিবছরই কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। আতশবাজির কারণে ঘটে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও। পশ্চিমা কিছু অপসংস্কৃতি কয়েকবছর ধরে হানা দিয়েছে পুরাণ ঢাকার ছাদগুলোতে। চলে ডিজে পার্টি ও মদপানসহ নেশাসেবন। সরকারিভাবে নেই তেমন কোন নির্দেশনা বা উদ্যোগ।

বি. দ্র. এটা কোন মুসলমানদের উৎসব নয়। কিন্তু আজকাল আমাদের মুসলিম সমাজে এই অপসংস্কৃতি ঢুকে গেছে। তাই সবাই সাবধান হন। এই বিদ’আতটি হতে নিজে সাবধান হন ও অপরকেও সাবধান করুন। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন। -আমিন। ##

 সূত্রঃ সাপ্তাহিক আরাফাত

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button