
যুদ্ধশেষে পা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন
যুদ্ধশেষে পা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন
হারারা ইবনে কায়েস
ইয়ারমুকের প্রান্তর। মুসলিম ও রোমক বাহিনী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ২ লক্ষ ৪০ হাজার রোমক সৈন্যের নেতৃত্ব করছেন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের পুত্র স্বয়ং। মুসলিম বাহিনীর অধিনায়কত্ব করছেন সেনাপতি আবু উবাইদাহ এবং তাঁর অধীনে রয়েছেন খালিদ ইবনে ওয়ালিদ। ২ লক্ষ ৪০ হাজার রোমক সৈন্যের মোকাবেলা করার জন্য খালিদ ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীকে এক অপূর্ব কৌশলে ৩৬টি দলে বিভক্ত করলেন। তারপর মুসলিম বাহিনী তাঁর ঐতিহ্য অনুযায়ী রোমক শিবিরে সত্যের দিকে আহবান জানিয়ে শান্তির বার্তা প্রেরণ করল। রোমকরা এর জবাব দিল অস্রের মাধ্যমে।
পুনঃপুনঃ পরাজয়ের গ্লানিতে রোমক বাহিনী ক্ষিপ্ত জানোয়ারের মত আপতিত হলো ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর উপর। কিন্তু আঘাতের পর আঘাত খেয়ে রোমক বাহিনীই অবশেষে পিছু হটল, মুসলিম বাহিনীকে হটাতে পারল না এক ইঞ্জিও।
পরদিন আবার আক্রমণ শুরু হল। রোমক বাহিনীই আবার আক্রমণ করল। কিন্তু সেদিন মুসলিম বাহিনী শুধু আত্মরক্ষা নয়, পাল্টা আক্রমণ চালাল। রোমকরা সেদিন জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, আর মুসলমানরা তো হয় জয় নয় শাহাদাতের আকাংখা নিয়েই যুদ্ধে নেমেছেন। সুতরাং সেদিন ইয়ারমুক প্রান্তরে যে যুদ্ধ শুরু হল তাঁর বর্ণনা অসম্ভব। শত্রুনিধন ছাড়া কারো কোন বাহ্যিক জ্ঞান পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। অদ্ভুত সে দৃশ্য। ২ লক্ষ ৪০ হাজার রোমক সৈন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বলিয়ান, আর ৪০ হাজার মুসলিম সৈন্যের একমাত্র শক্তিই হলো তাদের ঈমান-সত্যের জন্য জীবন দেয়ার অদম্য আকাংখা। এক এক মুসলিম সৈন্য সেদিন একশ জনে পরিণত হয়েছিল। অবশেষে রোমক শক্তি নেতিয়ে পড়ল, পরাজিত হলো। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। শত্রু হননে তখন মত্ত তারা। সেনাপতি সৈনিকদের মত্ততা দূর করার জন্য যুদ্ধবিরতির বাদ্য ধ্বনি করতে আদেশ দিলেন। সৈনিকদের সম্বিত ফিরে এলো। সম্বিত ফিরে পেয়ে তারা যখন চারদিকে চাইলেন, দেখলেন, চারদিকে রোমক সৈন্যের লাশ ছাড়া আর কিছু নেই। মুসলিম সৈন্যের মত্ততা সম্পর্কে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন, “ইয়ারমুক যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা শত্রু নিধনে এমনি একাগ্র ছিল যে, হারারা ইবনে কায়েসের একটি পা যে কখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সে টেরই পায়নি। যুদ্ধ শেষে সুপ্তোদিতের মত হাসতে হাসতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি পা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।”
এই ভয়াবহ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর তিন হাজার মুজাহিদ শহীদ হয়েছিলেন, আর রোমক পক্ষে মারা গিয়েছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজার সৈন্য।
এই শোচনীয় পরাজয় বার্তা শ্রবণ করে রোম সম্রাট এশীয় ভূখণ্ড ছেড়ে কনষ্ট্র্যান্টিনোপালে আশ্রয় নিয়েছিলেন । যাবার সময় যুগ যুগ ধরে ভোগ করা সিরিয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্যের দিকে চেয়ে বলেছিলেন, “বিদায় হে সিরিয়া, শত্রুদের জন্য তুমি কি সুন্দর দেশ!”
সুত্রঃ আমরা সেই সে জাতি, আবুল আসাদ।