
ছয়টি বিশেষ যিকির!
কুরআন কারীম ও হাদীসে বেশি বেশি যিকির করার কথা বলা হয়েছে। নিশ্চয় নামাযের পর, কুরআন কারীম তিলাওয়াতই শ্রেষ্ঠ যিকির!তাই যতবেশি পারা যায় কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। কিছুই না পারলে, সূরা ফাতেহাটা হলেও বারবার পড়া।
বিখ্যাত তাফসীর ‘তাইসীরুল কারীমির রাহমান’ এর লেখক আল্লামা ইবনে সাদী রহ: তাঁর কিতাব ইলমুল আকাঈদ ওয়াত ত্বাওহীদ ওয়াল আহকামের ৪৭নং পৃষ্ঠায় ৬টি বিশেষ জিকির উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল:
১) বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করা। দুরূদ সৌভাগ্যের প্রতীক। দুনিয়া আখেরাতে কামিয়াবির সোপান। একসাথে আল্লাহ তা‘আলা ও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুশি হওয়ার কার্যকর মাধ্যম। প্রতিদিন যত বেশি পারা যায়। আমার দুরূদ পাঠের পরিমাণের সাথেই আমার সৌভাগ্যের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। সুযোগ পেলেই বলতে পারি:
صلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
আল্লাহ তার প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।
(২) ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। সুযোগ পেলেই বলা:
-আস্তাগফিরুল্লাহ (ﺃﺳﺘﻐﻔﺮ ﺍﻟﻠﻪ)! আমি ক্ষমা চাই।
একটু ফাঁক পেলেই চট করে পড়া। দিনেরাতে বেশি বেশি পাঠ করা।
(৩) বেশি বেশি ‘ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম (ﻳﺎﺫﺍ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ) বলা। হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী! নবী সা: বলেছেন:
ﺃﻟﻈّﻮﺍ ﺑـ ﻳﺎ ﺫﺍ ﺍﻟﺠﻼﻝ ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ
তোমরা নিয়মিত বেশি বেশি ‘ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম’ বলো! (তিরমিযি)।
নবীজি সা. এ-দু’টি নাম বেছে নেয়ার কারণ হলে:
ক. জালাল শব্দটার মধ্যে জামাল-সৌন্দর্য, কামাল-পরিপূর্ণতা, আযমত-বড়ত্ব ফুটে ওঠে!
খ. ইকরাম শব্দটার মধ্যে আতা‘-বৃষ্টির মতো দান, জূদ-উদারহস্তে প্রদান ফুটে ওঠে!
শব্দ দু’টির অর্থের দিকে খেয়াল করলে বোঝা যায়, আমি একই সাথে রাব্বে কারীমের উচ্চতর প্রশংসা করছি আবার পাশাপাশি তার কাছে ‘প্রার্থনা’ করছি। ভিক্ষা করছি। নিজের অভাবের কথা তুলে ধরছি। তার কাছে নিজের অসহায়ত্বকে বিনীতভাবে পেশ করছি। আমি যিকিরটা করলে, এটা তো নিশ্চিত: আল্লাহ ভীষণ খুশি হবেন। আর তিনি খুশি হলে আর কিছু লাগে? তিনি আমার অভাব-অনটন, চাওয়া-পাওয়ার কথা তো জানেনই! আর চিন্তা কিসের! ভাবনা কিসের! তিনি দুকূল চাপিয়ে উপচে দেবেনই দেবেন!
(৪). লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
ﻻ ﺣﻮﻝ ﻭﻻ ﻗﻮﺓ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻠﻪ
আল্লাহ ছাড়া কোনও শক্তি ক্ষমতা নেই।
নবিজী সা. অনেক সাহাবীকে এই যিকিরটা করতে বলেছেন। বারবার তাকিদ দিয়েছেন। বাক্যটা সম্পর্কে নবীজির অবিস্মরণীয় মন্তব্য হলো:
ﻛﻨﺰ ﻣﻦ ﻛﻨﻮﺯ ﺍﻟﺠﻨﺔ
জান্নাতের অন্যতম ধনভান্ডার!
(৫). এবার সরাসরি কুরআনের আয়াত। এবং সেটা একজন নবীর মুখনিঃসৃত দু‘আ। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনয-যলিমীন:
ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺇﻧﻲ ﻛﻨﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ
(হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনও মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী (আম্বিয়া: ৮৭)।
কেউ ছিল না। কোনও সহায় ছিল না। উপায় ছিল না। সম্বল ছিল না। মাছের পেটে ঘুটঘুটে আঁধারের মধ্যে ছিলেন। বাঁচার কোনও আশাই ছিল না। ইউনুস আ. মরিয়া হয়ে দু‘আটা পড়তে শুরু করলেন। ফলাফল সবার জানা। একটা দু‘আতেই কেটে যাবে যাবতীয় দুঃখ-শোক। শুধু তাই নয়, আমাকে পৌঁছে দেবে মুক্তির আনন্দবন্দরে!
(৬). সুবহানাল্লাহ,আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ,আল্লাহু আকবার বেশি বেশি পাঠ করা।
ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ، ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ، ﻻﺍﻟﻪ ﺍﻻﺍﻟﻠﻪ ،ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ
আমি ঘোষণা করছি, আল্লাহ পবিত্র । সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ।
একটি অব্যর্থ মূলনীতি: দু‘আ ও যিকির কার্যকর হওয়ার একমাত্র উপায় হলো:
ক. বেশি বেশি বারবার করা।
খ. মরিয়া হয়ে করা। আল্লাহর কাছে পীড়াপীড়ি করা। দিতেই হবে। দিয়েই দিন।
গ. যা বলছি, যা করছি, বুঝে বুঝে বলা ও করা।
-সংগৃহীত