
অণুগল্প : “স্পেশাল অফার”
১.
অভি আর সালিহ রুমমেট। অনেকদিন হলো তারা একই রুমে আছে। আধুনিক হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে অভি। সেই ক্লাস টেন থেকেই। রিলিজ হওয়া প্রতিটি ইংলিশ মুভিই সে দেখে। বাদ যায় না কোনোটিই। মুভি থেকে সে নিত্যনতুন স্টাইল আবিষ্কার করে, আর সেগুলো অনুসরণ করে। সালিহ ছেলেটা ধার্মিক। আল্লাহভীরু। এ বয়সেই বড় দাড়ি রাখার কারণে, অভি প্রায়ই তাঁকে জংলি বলে ঠাট্টা করে। অবশ্যি সালিহ এতে কিছু মনে করে না। বিন্দুপরিমাণ কষ্টও পায় না।
সালিহ অভিকে নেক কাজের নির্দেশ দেয়। সালাতে যত্নবান হতে বলে। কিন্তু সালিহর কথাগুলো অভি এক কান দিয়ে শুনে, আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। কোনো কোনো সপ্তাহে জুমুআ পড়তে গেলেও, বাদবাকি সালাতের কোনো খোঁজই রাখে না অভি। সালিহ সালাতের তাকাজা দিলে ও বলে, ‘আরে বন্ধু, এতো তাড়া কীসের? যাক না কিছুদিন। লাইফটা একটু ইনজয় করে নিই। যখন বুড়ো হবো, নাতি-নাতনি হবে, তখন না হয় দেখা যাবে।’
২.
পিসিতে ইংলিশ মুভি দেখছিলো অভি। এ মাসে নতুন যে মুভিটা রিলিজ হয়েছে, সেটা। ছবির রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলোর জন্যেই মূলত অপেক্ষা। হঠাৎ মেগাবাইট শেষ। মনটা খারাপ হয়ে গেলো অভির। ফোনে যে ব্যলেন্স আছে, তা দিয়ে ১ জিবি কেনা সম্ভব হবে না। কিন্তু মেগাবাইট তো লাগবেই। যে করেই হোক, রোম্যান্টিক দৃশ্যগুলো দেখেই ঘুমুতে হবে। আজই। নয়ত যে মনটা তৃপ্তি পাবে না। কী করা যায়, কী করা যায়?
মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠল। অভি ফোনটি হাতে নিলো। অভির মন খুশিতে নেচে উঠল। সিম কোম্পানি মেসেজ পাঠিয়েছে।
Enjoy 1GB only 6 Tk (12-10Am) with 12 hours validity, to START the offer dial *111*222#
অভি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। দ্রুত অফারটি চালু করলো। এখন শুধু অপেক্ষা। মাত্র দু-ঘণ্টা পরেই ১২টা বাজবে। অভি ভাবলো ওর খুশির কারণটা সালিহকে বলবে। কিছু বলার আগেই সালিহ বললো, ‘কিছু বলবি অভি?’
অভি মাথা নাড়লো।
– ‘বল।’
– ‘জানিস কি হয়েছে?’
– ‘না বললে জানবো কী করে?’
অভি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে মেসেজটা সালিহকে দেখালো। সালিহ বললো, ‘মেসেজটা কিছুক্ষণ আগে আমার ফোনেও এসেছে?’
– ‘কই, তোর মধ্যে তো কোনোরকম ফিলিংস দেখলাম না?’
– ‘আসলে আমি এর থেকেও মজার একটি অফার পেয়েছি, তাই আর ওদিকে খেয়াল করিনি।’
– ‘তাই নাকি! কী অফার রে বন্ধু? তুই কি এর থেকেও কম টাকায় ১ জিবি পেয়েছিস? নাকি ফ্রি মেগাবাইট এসেছে?’
সালিহ কিছু বললো না। হাদীস অ্যাপ থেকে একটি হাদীস বের করে বললো, ‘অভি! এই আমার অফার। কিছুক্ষণ আগেই অফারটির কথা জেনেছি।’
অভি সালিহর ফোনটা হাতে নিলো। এরপর বললো, ‘কই? কই অফার? আমি তো কোনো মেসেজ দেখছি না।’
– ‘ঐতো মেসেজ।’
– ‘এটা তো হাদীস।’
– ‘হ্যাঁ, হাদীস। কিন্তু হাদীসের মধ্যেই একটা স্পেশাল অফারের মেসেজ আছে। তুই কি হাদীসটা একবার পড়বি?’
অভি হাদীসটা পড়ল—“মহামহিম আল্লাহ রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে, নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন। এরপর ঘোষণা করতে থাকেন—‘কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেবো। কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাঁকে দেবো? কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাঁকে ক্ষমা করবো।’”[বুখারী, তাহাজ্জুদ অধ্যায়, হাদীস : ১০৭৯]
অভি ফোনটা সালিহকে দিয়ে ওর বিছানায় চলে গেল। কখন ১২ টা বাজে, তার অপেক্ষা করতে লাগল। ওদিকে সালিহ দ্রুত বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঠিক তিনটের সময় সালিহর ফোনে এলার্ম বেজে উঠল। সালিহর ঘুম ভাঙল। অভি এখনও জেগে আছে। মুভি দেখছে। সালিহ ওযু করে এলো। অভির মুভি দেখা শেষ। পিসি বন্ধ করে সে শুয়ে পড়ল। সালিহ সালাতে দাঁড়াল। সূরা ফাতিহা শেষ করে সূরা নাযিআত পড়তে লাগল। সালিহ যে আয়াতগুলো পড়ছে, তার ভাবানুবাদ এমন—“অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে, সেদিন মানুষ যা করেছে তা স্মরণ করবে। এবং দর্শকদের জন্যে জাহান্নাম প্রকাশ করা হবে। অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করেছিল, এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল; জাহান্নামই হবে তার আবাসস্থল। পক্ষান্তরে যে যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করেছিল, এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিল; জান্নাতই হবে তার বাসস্থান।” [সূরা নাযিআত : ৩৪-৪১ আয়াত]
আয়াতগুলো তিলাওয়াত করার সময় সালিহর দাড়ি ভিজে যাচ্ছিল। সে পাঞ্জাবীর আস্তিন দিয়ে বারবার চোখ মুচ্ছিল।