হিজাব বিরোধিতা

সুশীল, সেক্যুলার, ফেমিনিস্ট বা নাস্তিকদের কথা বলার প্লাটফর্ম দিলে ইনিয়ে বিনিয়ে তারা ইসলামের হাতে গোনা যে কয়টা বিষয় নিয়ে আপত্তি দেখায় তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে হিজাব বা পর্দা। আর কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তো কথাই নেই। ‘এই মেয়েটা কি বুরকা বা পর্দার কারণে ধর্ষিত হয়েছে? ছেলেদেরই আসলে আগে আদব শিখাতে হবে’ এরকম ইঙ্গিতপূর্ণ লিখা, আলোচনা ইত্যাদিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো, টক-শোগুলো উথাল পাথাল করে। এইধরনের মেসেজের আড়ালে যা থাকে তা হল সরাসরি আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনের একটি আয়াতকে অস্বীকার –

يَـٰٓأَيُّہَا ٱلنَّبِىُّ قُل لِّأَزۡوَٲجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡہِنَّ مِن جَلَـٰبِيبِهِنَّۚ ذَٲلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورً۬ا رَّحِيمً۬ا ٥٩) ۞

“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” [সূরা আহযাব, ৫৯]

অথচ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের একটি আয়াতকে যে অস্বীকার বা হেয় করা হচ্ছে তার দিকে লক্ষ্য থাকে না প্রথমে উল্লেখিত ধরনের অনেক মানুষের। এদের কেউ কেউ কিন্তু দ্বীনের ক্ষেত্রে আন্তরিক হলেও সেক্যুলার, জাহিল, নাস্তিক বা নাস্তিক্যবাদীদের সাথে উঠাবসার ফলে মনের অজান্তে আল্লাহর আয়াত বিরোধী, ইসলামবিদ্বেষী যুক্তিকে তারা নিজেদের জ্ঞানের ঝুলিতে স্থান দিয়ে দেয়।

কুরআনের উক্ত আয়াতে বা ইসলামের কোথাও সব ধরনের ধর্ষণ বা উত্যক্ততা থেকে বাঁচবার একমাত্র মাধ্যম এককভাবে পর্দা – সেকথা মোটেও বোঝানো হয় নাই। বরং ইসলামের অন্যান্য অনেক বিধানের মতো পর্দার বিধানও যে এই সমস্যা সমাধানের অংশ তা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও পর্দাশীন বোনদের কাছে এমন ঘটনা অহরহই শোনা যায় যে তাদেরকে রাস্তায়, বাসে সহ সব পাবলিক জায়গায় আলাদা সম্মান করা হয়, তবুও কিছু কুলাঙ্গার ধর্ষক আর নাস্তিক-সুশীল-বুদ্ধিহীন পরজীবীদের অর্থহীন অথর্ব আলাপ মাথায় রেখে ইসলামের পুরো সিস্টেমে একটু চোখ বুলানো উচিত।

[১] পর্দার বিধান যেমন ফরজ, তেমনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম কায়েম করাও একটি ফরজ। ইসলাম ব্যক্তিগত পর্যায়ের ইবাদাতের কথা আগে বলে, কিন্তু কখনোই তাতে সীমাবদ্ধ থাকতে বলে না। তাই ধরে নিলাম আল্লাহর দেওয়া সবধরনের ফরজ পালন করার ফলে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েম হল। আর তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে দেখা যাক –

ইসলামি শাসনব্যবস্থায় সব ধরনের বেহায়াপনা আর বিজাতীয় সংস্কৃতির ফুটো – রাস্তাঘাটে, বিলবোর্ডে, এমনকি খেলার মাঠেসহ সমস্ত জায়গায় নারীদেরকে পণ্যকরণ নিষিদ্ধ। সেখানে বিয়ে সহজ, বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে করবার জন্য তাগাদা, বিয়ের প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হয়। প্রয়োজনে বিয়ের জন্য রাষ্ট্রের সাধ্যমত অর্থ দিয়ে সাহায্য করা হয়। এমনকি নারীরা যে ওয়ালির অনুমতি ছাড়া পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে পারে না, সেখানেও ইসলামি সরকার নারীর ওয়ালি হিসেবেও অবতীর্ণ হয়ে বিয়ে করিয়ে দিতে পারে (বিস্তারিত অন্যদিন)। কামনা বাসনার উদ্রেক করে এমন সব ধরনের ছিদ্র বন্ধ – পর্ণোগ্রাফি থেকে শুরু করে পতিতালয়। মোটকথা ব্যভিচারের সব পথ সাধ্যমত বন্ধ।

এহেন পরিস্থিতিতেও কেউ ধর্ষণে জড়ালে আর তা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাথর ছুঁড়ে হত্যার মত বিধান। বেহায়াপনা বন্ধ করার জন্য এত্ত এত্ত কিছু… এতকিছুর বিধান দেওয়া হলেও সমস্তটা উপেক্ষা করে কেবল হিজাবকে আর হিজাবের হিকমাহকে কটাক্ষ করে সরাসরি আল্লাহদ্রোহীতা সত্যিই সুশীল, নাস্তিক আর তত্ত্ব কপচানো বুদ্ধিহীন পরজীবীদের মস্তিষ্কের প্রকৃত পরিচয় উন্মোচন করে দেয়।

[২] ‘শালীন মেয়েরাও তো রেপড হয়’ বা ‘ছোট্ট ওই মেয়েটি তো আর হিজাবের কারণে রেপড হয় নাই’ এইসব কথায় কেবল ছেলেদের মধ্যকার কুলাঙ্গারদের কথাই মাথায় রাখা হয়। অথচ ভাল ছেলেরাও ইভ টিজিংয়ের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, একটা হাইপার সেক্সুয়াল সমাজব্যবস্থার দ্বারা ক্রমাগত মানসিকভাবে অত্যাচারিত হতে থাকে সেকথা উপেক্ষা করা হয়। আর মেয়েদের মধ্যেও যে হাতকাটা, কাঁধকাঁটা থার্ডক্লাস সব কাপড় পরে ছেলেদের নজর আকর্ষণ করে বেড়ানো কুলাঙ্গার রয়েছে সেকথাও বলা হয় না। অথচ কুলাঙ্গার সবশ্রেণীতেই রয়েছে। কুরআনের ভাষায় এরা ব্যাভিচারী-ব্যভিচারিণী।

“ব্যাভিচারিণী নারীরা ব্যভিচারী পুরুষদের জন্যই, আর ব্যভিচারী পুরুষেরা তো ব্যাভিচারিণী নারীদের জন্যই। সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষেরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্য… ” (সূরা আন-নূর, ২৬)

শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ের কথা বললেও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বই আবার প্রমাণিত হয়। কারণ ইসলাম পুরুষ বা মহিলা কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না। বরং উভয়কেই একসাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কী করতে হবে তা বলে দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু তো পুরুষ নারী উভয়কেই আলাদা আয়াত নাযিল করে দৃষ্টি, লজ্জাস্থানের হিফাজত করতে বলেছেন। সেটা মেনে দুইদিক থেকেই শালীনতা প্র্যাক্টিস করতে হবে।

قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَـٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡ‌ۚ ذَٲلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡ‌ۗ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ٣٠

“ঈমানদার পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।”

وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَـٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَـٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَا‌ۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِہِنَّ‌ۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآٮِٕهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآٮِٕهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٲنِهِنَّ أَوۡ بَنِىٓ إِخۡوَٲنِهِنَّ أَوۡ بَنِىٓ أَخَوَٲتِهِنَّ أَوۡ نِسَآٮِٕهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَـٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّـٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِى ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٲتِ ٱلنِّسَآءِ‌ۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ‌ۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ (٣١)

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা আন-নূর, ২৪ঃ ৩০-৩১)

[৩] আখিরাত ছাড়া, আখিরাতের বিচার ছাড়া সব গল্পই অপূর্ণ।

মেয়েরা শালীন হওয়ার পরও রেপড হলে সেটা পুরোপুরি ছেলেটির দোষ আর আল্লাহর বিধানে যে এর কড়া শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা পাথর ছুঁড়ে হত্যার মতো কঠিন বিধানেও কি অপরিষ্কার? আর অনৈসলামিক ব্যবস্থায় সেটা এই মুহুর্তে সম্ভব না হলেও সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক আল্লাহ বিচার অবশ্যই করবেন। আখিরাতকে ছাড়া কোন হিসাবের খাতাই বন্ধ হয় না। তাই আল্লাহর বিধান মেনে নিয়ে পুরুষরা দৃষ্টি সংযত করবে ও নিজেদের পর্দা করবে। আর নারীরাও দৃষ্টি সংযত করবে ও নিজেদের পর্দা করবে।

একটি মেয়ে শালীন হওয়ার পরও রেপড হলে বা কোনো বাচ্চা মেয়ে যার পর্দার বয়সই হয় নাই এমন কেউ রেপড হলে সেটা পুরোপুরি ধর্ষক ছেলেটার(গুলোর) দোষ সেটা নিয়ে কোনোই সংশয় নেই। কিন্তু একটি মেয়ে যদি শালীন না থাকে, Just Friend নামে গায়েরে মাহরাম ছেলেদের সাথে ঘেষে বেড়ায় আর ফলে ছেলে কুলাঙ্গারদের দ্বারা উল্টোপাল্টা ব্যবহার পায় বা ধর্ষিত হয়, তাহলে সেখানে একচেটিয়া মেয়েটির পক্ষে লাফালাফি অযৌক্তিক! কারণ মেয়েটিও নিজ দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করে নি। এখানে এক হাতে তালি বাজে নাই। মেয়েরও দোষ আছে, ছেলেরও দোষ আছে। বাহ্যিকভাবে ছেলের দোষ হয়তো বেশি মনে হচ্ছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে মেয়েটি নিষ্পাপ।

ঘরের দরজা খোলা রেখে বাহিরে যাবে আর চুরি হবে না তা ভাবা হাস্যকর। তেমনি হাস্যকর ‘আগে ছেলেকে’ বা ‘আগে মেয়েকে শালীনতা শেখানো’র বুলি আওড়ানো। সবচেয়ে যৌক্তিক আর বাস্তববাদী অ্যাপ্রোচ ছেলেমেয়ে উভয়কেই একসাথে আল্লাহকে ভয় করতে বলা, উভয়কেই একসাথে নিজেদের বিধান মেনে চলে শালীনতা প্র্যাক্টিস করতে বলা। আর ইসলাম সেটা বলে দেখেই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ের দৃষ্টিকোণ থেকেও ইসলাম সবচেয়ে যৌক্তিক আর বাস্তবিক।

[ কারও কাছে জবাবদিহি করতে ইসলাম আসে নাই, তাহলে এত কথা কেন লিখলাম? সমাজের সুশীলদের চটুল টকশো, ছুপা নাস্তিক, ফেমিনিস্ট, সংশয়বাদী আর জাফর ইকবালদের কলাম, গল্প, উপন্যাস থেকে যখন আমার ভাইবোনদের দেখি না বুঝে তাল মিলাচ্ছে, কৌশলে নিজেরাও ইসলাম বিদ্বেষীতায় ঝুঁকে পড়ছে তখনই লিখার প্রয়োজন পড়ে। ওইসব বুলি আওড়ানো চুশীল, নাস্তিক, ফেমিনিস্টরা না মানুক, কিন্তু মাঝে আমার কিছু ভাইবোনেরা উপকৃত হোক। ]

সুত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

  1. আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলের(সাঃ) নির্দেশ অমান্য কারীর দুনিয়াতে যেমন কষ্ট , লানত ভোগ করতে হবে ঠিক একই ভাবে পরকালেও রয়েছে অনন্তকাল শাস্তি জাহান্নাম- যেখানে তারা চিরকাল থাকবে ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button