
প্রশ্ন: সুতরা কি?
উত্তরঃ সুতরাহ শব্দের অর্থ আড়াল। কোনো ব্যক্তি যখন সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন কোনো কিছুর সামনে দাঁড়াবে[1] অথবা কোনো কিছুকে তার সামনে দাড়া করাবে, তা সম্ভব না হলে অন্তত একটি দাগ টেনে দিবে, এটাই সুতরা। সুতরার উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাতের সামনে আড়াল সৃষ্টি করা, এতে করে সুতরার বাহির দিয়ে মানুষ বা অন্য কিছু চলাচল করতে পারবে। কিন্তু সুতরার ভিতর দিয়ে চলাচল করা নিষিদ্ধ।
নামাজীর সামনে বেয়ে কেউ পার হবে না এরুপ ধারনা থাকলেও সামনে সুতরাহ রেখে সালাত আদায় করতে হবে।[2] বাড়িতে, সফরে, মাসজিদে সকল স্থানে একাকী ও ইমামের জন্য সুতরাহ ব্যবহার করা জরুরী। তবে জামাআতে সালাত আদায় করলে ইমামের সুতরাহই মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট, তখন মুক্তাদির সুতরার কোনো প্রয়োজন নেই[3] এবং মুক্তাদির সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোনো দোষ হবে না।[4]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করবে, তখন সে যেন সামনে সুতরাহ রেখে সালাত আদায় করে।”[5]
এছাড়াও সুতরাহ ছাড়া সালাত আদায় করতে তিনি নিষেধ করেছেন।[6]
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন কোনো কিছুর সামনে দাঁড়াতেন, অথবা সামনে কিছু দাঁড় করিয়ে দিতেন, কিংবা অন্তত সামনে একটা রেখা এঁকে দিতেন। তিনি সালাতের সামনে আড়াল সৃষ্টিকারী(সুতরা) কিছু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কখনো দেয়াল সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। তখন তার সাজদা ও দেয়ালের মাঝখান দিয়ে একটি বকরী বা ভেড়া পার হবার জায়গা থাকতো মাত্র। তার ও সুতরার মাঝে এর চাইতে বেশী দূরত্ব থাকতো না। বরং তিনি সুতরার নিকটবর্তী দাঁড়াবার নির্দেশ দিয়েছেন। কখনো তিনি খাট, কাঠ, গাছ কিংবা মসজিদের খুঁটিকে সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন।
যখন (তিনি) যুদ্ধের সফরে থাকতেন, কিংবা কোনো খোলা মাঠে সালাত আদায় করতেন, তখন সামনে হাতিয়ার গেড়ে সেটাকে সুতরা বানিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং লোকেরা তার পিছনে সালাত আদায় করতেন। কখনো বাহন সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন, বাহঙ্কেই সুতরা বানিয়েছেন। কখনো কখনো সোয়ারীর আসনকেই সুতরা বানিয়েছেন।
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসল্লিদের নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো আড়াল পাওয়া না গেলে অন্তত তীর বা লাঠি সামনে পুতে নিয়ে সেটাকে সুতরা বানিয়ে যেনো তারা সালাত আদায় করে। তীর বা লাঠিও পাওয়া না গেলে অন্তত সামনে মাটিতে যেনো একটি রেখা এঁকে নেয়। আবু দাউদ বলেন, আমি আহমাদ ইবন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মাটিতে রেখা আঁকলে সেটা নতুন চাঁদের মতো আড়াআড়ি আঁকবে। আব্দুল্লাহ বলেছেন, লম্বালম্বি আঁকবে। আর লাঠি গাড়লে সেটা খাড়া করে গাড়বে।”[7]
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালীহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “সুতরা গ্রহন করা সুন্নাতে মুআক্কাদা[8]। তবে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে মুক্তাদির জন্য সুতরার দরকার নেই। ইমামের সুতরাই মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট। …
হাদীসে এসেছেঃ ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন সালাত আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরা করে নেয়।’ [9] হাসান সনদে আবু দাউদে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘কোনো কিছু না পেলে যেন একটি দাগ টেনে নেয়।’ হাফেয ইবনু হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে বলেনঃ ‘যারা হাদীসটি মুযতারাব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা সঠিক করা বলেন নি।’ সুতরাং হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করার তেমন কোনো কারন নেই।”[10]
কেউ কেউ ‘দাগ’কে সুতরাহ হিসেবে ব্যবহার করাকে বৈধ মনে করেন না, তাদের দাবী হচ্ছে ‘কোনো কিছু না পেলে যেন একটি দাগ টেনে নেয়’ এই হাদীসটি দুর্বল।[11]
তবে উক্ত হাদীসটিকে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী এবং শাইখ ইবন উসাইমীন গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন। এছাড়াও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল(রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম ইবনুল কায়্যিম(রাহিমাহুল্লাহ) সুতরাহ হিসেবে দাগ টেনে নেওয়াকে বৈধ বলে গণ্য করেছেন যা ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি।
তথ্যসূত্র
[1] . যেমনঃ দেয়াল।
[2] . আলবানী, সিফাতু সালাতিন নাবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), পৃঃ ৮২
[3] . সহীহ বুখারী, হাদীসঃ ৪৯৩ ; সহীহ মুসলিম, হাদীসঃ ৫১৪
[4] . সহীহ বুখারীর ৪৯৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখ ইবন বায (রাহিমাহুল্লাহ) এ ফাতওয়া দিয়েছেন। [শাইখ সাঈদ ইবন আলী আল-কাহতানী,সালাত আদায়ের পদ্ধতি, পৃঃ ৩]
[5] . মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সহীহ ইবন হিব্বান, সহীহুল জামে, হাদীসঃ ৬৫০, ৬৫১
[6] . সহীহ ইবন খুজাইমাহ, হাদীসঃ ৮০০
[7] . ইবনুল কায়্যিম, কিতাবুস সালাত, পৃঃ ৯২-৯৩
[8] . সুন্নাতে মুআক্কাদা বলা হয় সেই সুন্নাতকে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ। শরীয়তে গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের পরেই সুন্নাতে মুআক্কাদার স্থান।
[9] . মুসনাদে আহমাদ, হাদীসঃ ১৪৭৯৯ ; ইবনু খুযাইমা, অনুচ্ছেদঃ মুসল্লীর সুতরা।
[10] . ইবন উসাইমীন, ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃঃ ৩১৮
[11] . শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীসকে যঈফ বলেছেন তার তাহকীক আবু দাউদ গ্রন্থে। আর আলবানীর তাহকীককে দলীল হিসাবে গ্রহন করে শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী তার সালাতে মুবাশশির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গ্রন্থের ১৩০ নং পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ “প্রকাশ যে, কিছু না পেলে দাগ টেনে নেওয়ার হাদীস সহীহ নয়।”