মহানবী (সাঃ) ও শিশু কান্না

শিশু কান্নার কারণে নামাজ সংক্ষিপ্তকরন

রাসূল (সাঃ) বলেন কখনও কখনও জামাতে সালাত আদায় করার সময় আমার ইচ্ছা হয়। আমি কেরাত দীর্ঘ করি। কিন্তু পিছন থেকে কোন শিশুর কান্না শুনতে পেলে আমি নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। শিশু কান্নায় মায়ের মন অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

শিশুর প্রথম ভাষা হলো কান্না। জন্মের পরই সে কেঁদে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে কথা না শেখা পর্যন্ত শিশুরা কান্নার মাধ্যমে তাদের চাহিদা জানান।

শিশুর পরবর্তী ভাষা হলো হাসি। আদর যত্ন পেয়ে শিশু যখন তার প্রতিক্রিয়া হাসির মাধ্যমে ব্যক্ত করতে পারে, তখনই থেকেই মায়ের কোলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়।

শিশুর নয়ন হলো স্বপ্ন সমুদ্র। এ সমুদ্রের গভীরে কত মনি-মানিক্য লুকিয়ে আছে তা আবিস্কারে মায়ের জীবন শেষ হয়ে যায়। শিশুর নয়ন সমুদ্র দেখা সমুদ্র দর্শন হতে কম আনন্দদায়ক নয়।

সুন্দর মন মুগ্ধকর ফুল বাগানে ফুটে থাকে। আমরা পাশ দিয়ে চলে যাই, লক্ষ্য করিনা। ফুল-প্রেমিক এবং বিশেষজ্ঞ সে সৌন্দর্য অবলোকন করেন।

একটি শিশু-বাগে কত প্রতিভার অবস্থান লক্ষ্য করিনা। শিশুর চোখে থাকে আশা, স্বপ্ন, ভালোবাসা, আনন্দ। এত অর্থবহ দৃষ্টি এবং এতো মধুর দৃশ্য আর কোথায় দেখা যায় ?

অকারণে শিশুর কান্নার অশ্রু ফুলের পাপড়িতে শিশির বিন্দুর থেকেও সুন্দর।

আছাড় খেয়ে বেশী ব্যথা না পেলেও শিশু কাঁদেনা; যদি না কেউ সহানুভূতির দেখার জন্য কাছে থাকে। শিশুর দুষ্টামিতে বিরক্ত মা কাছে আগত শিশুকে দূরে সরিয়ে দিলে শিশু কেঁদে উঠে।

শিশুর মানস এবং আখলাক গঠনে মায়ের হাসি, আদর, গম্ভীর কালো মুখ হতে বড় গ্রন্থ এবং অস্ত্র আর কিছু নেই।

এমন কোন দুঃখ শিশুর নেই, যা তার মা দূর করতে পারেনা। এমন কোন চোখের পানি নেই, যা মা মুছিয়ে দিতে পারেনা। শিশুর মনে এমন কোন আঘাত নেই, যা তার মায়ের চুমু উপশম করতে পারেনা।

শিশুর কানে মায়ের অস্পষ্ট ফিস্ ফিস্ কথা, আশ্বাস বাণী শিশুর উথলে উঠা কান্না থামিয়ে দিতে পারে। খেলতে খেলতে শিশু পা পিছলে পড়ে হাতে, পায়ে, পিঠে ব্যথা পায়। কঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে দৌড়ে আসে। ব্যথার সব স্থানে মায়ের হাত বুলানো শেষ হওয়ার আগেই ব্যথার উপশম হয়ে যায়। শিশু আবার দৌড়ে খেলায় যোগ দেয়।

মা খেলার স্থানে না থাকলে ব্যথা পেয়ে শিশুর মায়ের কাছে আসে। বাড়ী পৌঁছে, মায়ের কাছে আসার আগ পর্যন্ত তার কান্না থামেনা।

আত্মবিশ্বাস

শিশুর অন্যান্য সমবয়সীদের সমান কাজে ব্যর্থতা বা সমমানের কাজে উদাসীনতা লক্ষ্য করে মনক্ষুন্ন হওয়া উচিত নয়।

যাদেরকে শিশুকালে ইচড়ে পাকা দেখা যায়, পরবর্তীতে তাদের পিছিয়ে পড়াও বিচিত্র নয়। যারা দেরীতে শুরু করে তারা পিছন থেকে এসে এগিয়েও আসতে পারে।

শিশুকালে শারিরীক বৃদ্ধি যেমন সব শিশুর এক গতিতে হয়না, মানসিক বৃদ্ধিও একই গতিতে হয়না। যার মানসিক বৃদ্ধি দেরীতে হচ্ছে, তাই তার জন্যে স্বাভাবিক ধরতে হবে।

কারো বুদ্ধিমত্তা শিয়ালের মতো হতে পারে, কিন্তু কারো সাহস এবং উদারতা হতে পারে সিংহের মতো।

দুঃখ ভারাক্রান্ত বয়স্করা মাথা তুলে তাকাতে পারে। নতুন আশায় বুক বেঁধে সম্মুখে এগিয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখী শিশু আশার আলো দেখতে পায়না। সে ভেঙ্গে পড়ে। তার জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।

শিশুদের দুঃখ দিতে নেই। শিশুকে স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করা এবং দুঃখ ও কষ্ট দেয়া হলো তাকে জীবনমৃত করে রাখা।

শিশু হৃদয়ে ছোট বেলা যে দাগ কাটে তা তিরোহিত হয়না। এর প্রভাব এবং চিহ্ন তার জীবনে চিরস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। যদিও ঘটনাটি সে ভুলে যাবে।

যে শিশুকে শিশুবেলা সুখের পরিবেশে রাখা হয় সে অন্যের দুঃখ বুঝতে পারবে। দুঃখী শিশু দুঃখ ততো অনুভব করতে পারবেনা, সুখে প্রতিপালিত শিশু যত অনুভব করবে।

পরের দুঃখ সুখী শিশুর হৃদয়ে যত দাগ কাটবে একটি দুঃখী শিশুর হৃদয়ে ততোটুকু দাগ কাটবেনা। কারণ, সেটা তার মনে হবে স্বাভাবিক এবং মামুলী।

আত্মবিশ্বাস

সরলতা শিশুর সহজাত গুণ। এটা নষ্ট না করে তাতে যোগ করে দিতে হবে আত্মবিশ্বাস। সে পারেনা এমন কাজ তাকে দেয়া ঠিক হবেনা। তাকে বুঝাতে হবে যে চেষ্টা করলে সব কিছু সম্ভব। আত্মশক্তির উপর বিশ্বাস সৃষ্টি করাতে হবে। এমন দায়িত্ব তার উপর দেয়া উচিত হবেনা যা সম্পন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রকৃতিতে ফুল সবচেয়ে সুন্দর বস্তু। তাই আমরা বলি শিশু ফুলের মতো সুন্দর। এক জাতীয় একটি ফুল অন্য ফুল হতে আকারে বা সুগন্ধে তিন চারগুণের বেশী পার্থক্য হয়না। একটি শিশুর ভবিষ্যত অন্য শিশু হতে হাজার গুণ বেশী সাফল্যময় হতে পারে। কেউ হয়তো সারা জীবনে নিজ সন্তান ছাড়া পাঁচটি শিশুর জীবিকার ভার বহন করতে পারবেনা। কিন্তু একটি শিশু এমন মানুষ হয়ে এমন সংস্থা প্রতিষ্ঠান করতে পারে যাতে হাজার শিশুর ব্যবস্থা হতে পারে।

সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button