
নবী পরিবারে শিশু-মুত্যু
নবী পরিবারে শিশু-মুত্যু
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শিশুরা ফুলের মত সুন্দর ও কোমল। তারা আল্লাহর বাগানের ফুল। রাসুলুল্লাহর তিনটি পুত্র ছিল। তাদের নাম কাসেম (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) এবং ইব্রাহীম (সাঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র আবদুল্লাহর দু’টি উপনাম ছিল- তাহের এবং তৈয়ব। মহানবীর কন্যাদের নাম যথাক্রমে জয়নব (রাঃ) রুকাইয়্যা, (রাঃ) উম্মে কুলসুম (রাঃ) ও ফাতিমা (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ বিবাহের পঞ্চম বছরে তাঁর জেষ্ঠ্য কন্যা জয়নবের জন্ম হয়।
ফুলের মতো নিস্পাপ মহানবীর শিশু পুত্র তিনটি পৃথিবীর রূপ রসগন্ধ অনুভব করার আগেই ধরার ধূলায় ঝরে যায়। শিশু বয়সেই তারা তিনজন মারা যান। পুত্র-স্নেহের সৌভাগ্য দিয়ে গেল। উম্মতের শিশু সন্তানদের।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জৈষ্ঠ্য পুত্র কাসেমের জন্ম হয় ৬০৭ খৃষ্টাব্দে। মহানবীর বয়স তখন ৩৭। তার মৃত্যু হয় দু’বছর বয়সের আগেই। তখন তিনি শুধু দাঁড়াতে পারতেন, এক পদ দু’পদ হাটতে পারতেন।
রাসূলুল্লাহর উপনাম ছিল আবুল কাসেম। অর্থাৎ কাসেমের পিতা।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ৪০ বছর বয়সে তার দ্বিতীয় পুত্র আবদুল্লাহর জন্ম হয়। এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। তিনি তখন ভালো করে দাড়াতে পারতেননা।
রাসূলুল্লাহর তিন ছেলের সর্ব কনিষ্ঠ ইব্রাহিম। মদিনার কয়েক মাইল দূরে মরুভূমির পরিবেশে তার প্রতিপালন হচ্ছিল। মহানবী তাকে দেখার জন্য পায়ে হেঁটে সেখানে যেতেন। পুত্রকে কোলে তুলে নিতেন, চুমু খেতেন।
রাসুলুল্লাহর (সাঃ) তৃতীয় পুত্র ইব্রাহীমের জন্ম হয় ৯ম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসে। রাসুল্লাহর বয়স তখন ৬১। দশম হিজরীর ২৯শে শাওয়াল ১৮ মাস বয়সে হযরত ইব্রাহীম মৃত্যু বরণ করেন। ঐদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। শিশু ইব্রাহীমের মৃত দেহকে রাসূলুল্লাহ চুমু দিয়েছিলেন এবং অশ্রু বিসর্জন করেছিলেন।
ইব্রাহীমের মাতা মারিয়া কিবতীয়াকে মিশর রাজ মুকাত্তকিস রাসূলের দরবারে পাঠিয়েছিলেন হাতিব ইবন আবু বুলতায়া (রাঃ) এর সঙ্গে। রাসূলুল্লাহর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৬ই মুহাররম মারিয়া কিবতীয়া (রাঃ) এর ওফাত হয়।
রাসূলের জৈষ্ঠ্য কন্যা জয়নবের একমাত্র পুত্র আলী কিশোর বয়সে মৃত্যু বরন করেন। মক্কা বিজয়ের পর মক্কা নগরীতে প্রবেশকালে উটের পিঠে রাসুলুল্লাহর সাথে ছিলেন শিশু দৌহিত্র আলী এবং উসামা বিন যায়েদ বিন হারিসা (সাঃ)।
রাসুলুল্লাহর দ্বিতীয় কন্যা রুকায়্যার একমাত্র পুত্র আবদুল্লাহ বসন্ত রোগে মারা যান (৪র্থ হিজরী)। মায়ের মৃত্যুর দু’বছর পর ৬ বছর বয়সে মারা যান আবদুল্লাহ। রুকাইয়্যার (রাঃ) স্বামী ছিলেন তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রাঃ)। রাসুলুল্লাহর চতুর্থ কন্যা ফাতিমার তৃতীয় পুত্র মুহসিন শিশুকালে মারা যান।
এ দুনিয়ার শিশুদের কতো কষ্ট হয়। মাছি শিশুকে বিরক্ত করে। মশা রক্ত চুষে নেয়। পিপড়া কামড়ায়। পায়খানা-পেশাবের ঠান্ডায় শিশু পা আছড়ায়। কিন্তু মৃত শিশুতো জান্নাতে আরামে থাকে। মা অন্ততঃ এটুকু নিশ্চিত হতে পারে যে আমার একটি শিশু জান্নাতবাসী হবে।
আমাদের প্রিয়নবী ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা এবং জন্মের আগেই পিতৃহারা হন। তাঁর দ্বিতীয় কন্যা রুকাইয়্যা দ্বিতীয় হিজরীতে, জেষ্ঠ্য কন্যা জয়নব ৮ম হিজরীতে এবং ৩য় কন্যা উম্মে কুলসুম নবম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। বিবি ফাতেমার মৃত্যু হয় বিশ্ব নবীর ওফাতের ছয় মাসের মাঝে। নবী করিম (সাঃ) এর প্রথম তিনটি কন্যাই তাঁর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন।
ছয়টি পুত্র কন্যার মৃত্যু শোক সহ্য করা যে কোন ব্যক্তির জন্যে অত্যন্ত কঠিন। শিশু সন্তান হারাবার ব্যথা কল্পনা করে অনুভব করা যায়না। যাদের সন্তান মারা গেছে তারাই বুঝতে পারে, এ ব্যথা কত গভীর।
মহানবীর তিন কন্যাই শিশু পুত্র হারাবার হৃদয়-বেদনা সহ্য করেন। তাদের শিশুরা মরেনি বরং মায়েদের জান্নাতে গমণের খোশ-খবরী দেয়ার জন্যে আগেই বেহেস্তে পৌছে যান। গৃহে শিশুদের হৈচৈ শুনে বয়স্করা বিরক্ত হয়। কিন্তু গৃহখালি করে শিশুরা যখন চলে যায়, সে শূন্যতা কী দিয়ে পূরণ করা যাবে ? নিজের মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনে এবং অতি কাছে দেখেও মানুষ অতো কাঁদেনা, যতো কাঁদে নিজ শিশুর মুত্যুতে।
শিশু সন্তান আল্লাহর দান, আল্লাহর দেয়া ফুল। এ ফুল শুকিয়ে গেলে দুঃখ করতে নেই। আল্লাহর কাছে নতুন ফুল চাইতে হবে। তাঁর ভান্ডারে উন্নততর ফুলের অভাব নেই। হারানো এবং প্রাপ্তি দুটোতেই আল্লাহর কাছে শুকুর গুজারী করতে হবে।
সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম