জেরুজালেম জয়
রচনায়: মনওয়ার হোসেন, ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ফরিদপুর, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা
ভূমিকা
জেরুজালেম জয় মুসলিম জাহানের গৌরবোজ্বল কৃতিত্বের কাহিনী। মুমিন-মুজাহিদগণের সকল কালের স্মরণীয় ইতিহাস। সর্বোপরি সেদিন জেরুজালেম জয়ের গৌরব প্রতিটি মুসলিমের শিরে সম্মানের শিরোপা পরিয়ে দিয়েছে। দ্বীন-দুনিয়ার দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে ইসলামের ইজ্জত।
এই জেরুজালেম জয়ের সাথেই সুলতান সিপাহসালার সালাহউদ্দীন স্বনামধন্য হয়ে আছেন। মুসলিম জাহানের সেই চরম সংকট সন্ধিক্ষণে তাঁর অমিততেজ, অসীম সাহসিকতা অতুলনীয়, অবিস্মরণীয়। বহু যুদ্ধে বিজয়ী বীররুপে তিনি সম্মানসূচক গাজীর মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। জেরুজালেম জয় করে আবার তিনি প্রমাণ করেন তাঁর বীরত্বের তুলনা একমাত্র তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ নাই। সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণিত হয়, ইসলামের আলো, ইসলামের সৌন্দর্য সবই সমুজ্জল। ইসলাম হলো সাহসের সনদ, সৌন্দর্যের সওগাত।
জেরুজালেম জয়ের প্রাক্কালে জেহাদের ময়দানে জামাতে নামাজ আদায় করে সাচ্চা সাহসী মুসলিম হিসেবে তিনি সেই পরিচয় দিয়েছেন। আবার শত্রু শিবিরে নির্ভয়ে চিরশত্রুকে সেবা-শুশ্রুষায় নিরাময় করতে হিম্মৎ হারান নি। সব দিক দিয়েই জেরুজালেম জয় মুসলিম জাহানের বিজয় ঘোষণা করেছে। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত, ইসলামের আলোকে আলোকিত, জেরুজালেম জয় যুগে যুগে মুমিন-মুসলিমদের সাফল্যজনক বিজয়। যুগে যুগে ধরে মুজাহিদ কাফেলার সে অভিজান চলছে–চলবে।
জেরুজালেম জয়
[সাত সাগর পাড়ি দিয়ে হানাদার আসছে বারবার। সারা ইউরোপ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিধর্মীর হামলায় মুসলিম জাহান টালমাটাল।
মুজাহিদ বাহিনীর সিপাহসালার গাজী সালাহউদ্দীন তবু অকুতোভয়। সেই প্রবল পরাক্রান্ত শক্তির বিরুদ্ধে তিনি জেহাদ ঘোষণা করলেন। স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন মোকাবেলা করবেন দুশমনদের। আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁর ওয়াদা, এই পবিত্র ওয়াতান বিধর্মীর নাংগা তলোয়ারে লাল হতে দেবেন না। রসলে করীমের (সঃ) পুত পরশ পেয়ে যে আরব ভূমি ধন্য সেখানে দুশমনদের দাপট বরদাশত করতে পারবেন না। মুমিন-মুসলিমদের এক বিন্দু রক্ত থাকতে তা সম্ভব নয়।
সেই সময় সমাগত নওল নকীব নওজোয়ানকে তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কাহিনী। সাহসে-সংগ্রামে, বীরত্বে-বীর্যে যে ইসলাম অনুপম ইতিহাস সষ্টি করেছে। যার নিশানবরদার বীর দালিয়ারদের তুলনা কোথাও নাই। যাঁরা যুগে-যুগে অনন্য-অতুলনীয়। স্মরণীয়-বরণীয়।
সংগে সংগে সিপাহসালার সালাহউদ্দীন সগবে আহবান জানালেন] :
জেরুজালেম জয়
জাগো মুসলিম মুজাহিদ তুমি
তুমি বীর-দালিয়া,
ফিরে নিয়ে এসো হায়দরী বাহু
খালেদের তলবার।
এই হতে যার কালামুল্লাহ
দিল রুখে ওঠ তেজে হামজাহ।
মুখে তৌহীদ বুকে জোশ দুর্বার।
জাগো মুসলিম মুজাহিদ তুমি
তুমি বীর-দালিয়ার।
যুগে যুগে দাস্ত্ লাল হয়ে আছে
শহীদী লহুর ছাব,
আল্লাহর নামে হিম্মতে সাফ্
জালিমের খুন-খারাব।
শত নমরূদ ক্রুসেড-সমুদ
তা’বা হলো বারবার।
জাগো মুসলিম মুজাহিদ তুমি
তুমি বীর দালিয়ার।
[বারবার সতেরো বার সমগ্র ইউরোপের সম্মিলিত বাহিনী পরাভূত হয়েছে। তারপরও ইউরোপের রাজন্যবর্গ হাজার-হাজার সৈন্য সমভিব্যাহারে আসছে। তাদের শৌর্যশক্তি অসীম। আধুনিক সমরাস্ত্রে তারা সুসজ্জিত।
স্বয়ং খ্রীস্টান নরপতি সম্মুখ-সমরে হাজির হয়েছেন। সদম্ভে তিনি ঘোষণা করছেন—ইসলামের শেষ চিহ্ন মুছে ফেলবেন। এবার সমুচিত সাজা দেবেন।
সেই মোতাবেক সেনাবাহিনীকে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন—জেরুজালেম জয় করা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন। আর তার পরাজয় বরণ করতে রাজী নয়।
সিপাহসালার সালাহউদ্দীন স্বকর্ণে শুনেছেন সে কথা। শুনেছেন খ্রীস্টান বীরের দম্ভ-মদমত্ততার কাহিনী। তিনি জানেন, সংগে রয়েছে তাদের বিরাট সেনাবাহিনী, বিপুল সমর-সাজ। অপর পক্ষে তাঁর সৈন্য-সংখ্যা বলতে মাত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদ। তাদের হাতে হাতিয়ার পর্যন্ত তেমন নেই।
তবু-ও ইসলামের ইজ্জত রাখা চাই। মুসলিম জাহানের গৌরব কখনো খুন্ন হতে পারে না। দুশমন-দুরাচারদের দূর করে দিতে হবে। সিপাহসালাঁর আবার সেই শপথের কথা শুনালেন ] :
দারাজ কণ্ঠে শোনালো সেদিন
গাজী সালাহউদ্দীন,
জেরুজালেমের দরজায় যেথা
শত্ৰুর পদচিন।
দল বেঁধে আসে দুশমন যতো।
বিপুল সমর সাজ
জেরুজালেমের আকাশে আবার
গুরু-গরজায় বাজ।
স্বয়ং এসেছে নৃপতি রিচার্ড
মহাবীর খ্রীষ্টান
বিপুল গর্ব মাথা পেতে দেবে
মোমিন মুসলমান।
হুঙ্কার ছাড়ে হায়দরী হাঁকে
গাজী সালাহউদ্দীন
দুনিয়াতে কভু মুসলিম জেনো
হবে নাকো পরাধীন।
ওমরের ত্যাগ হামজার তেজ
তারিকের হিম্মৎ
লভিয়াছি সবে রাখিতে আমরা
ইসলামী ইজ্জৎ।
[সিপাহসালার আবার আহবান জানালেন– নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে। নামাজ আদায় করো।
সেদিন জ্বেহাদের ময়দানে জামাতের সাথে মোনাজাত করলেন দ্বীন দুনিয়ার মালিকের দরবারে। যিনি সব বাদশাহর বড়ো বাদশাহ, সব বিচারকের বড়ো বিচারক। তিনি সবার অন্তরের সব কথাই জানেন। তাঁর অবিদিত তো কিছুই নেই। তিনি যে আলেমুল গায়েব।
সসৈন্যে সিপাহসালার তাই তাঁর কাছেই আরজ জানানঃ আল্লাহ,-আলগনী, তুমি-ই ইসলামের ইজ্জৎ রক্ষা করার মালিক। তোমার দয়ায়, রসলের দোয়ায় সারা দুনিয়ায় ইসলাম আবাদ হোক। মালিক মেহেরবান কবুল করো এই মোনাজাত। তোমারই ওয়াদা, মুমিন-মুসলিমদের তুমি জয়ী করবে। তোমার সে একরার কখনো বরখেলাফ হতে পারে না।
সিপাহসালার সালাহউদ্দীন পরম প্রিয় আল্লাহপাকের কাছে আবার আরজ জানালেন—আয় রহমান, তুমি তওফিক দাও। হিম্মৎ দাও। ইসলামের ইজ্জৎ যেনো রাখতে পারি। আমীন! আমীন।
জেহাদের ময়দানে জামাতের মুখে-মুখে জোর আওয়াজ উঠলো—ইয়া আল্লাহ, আমীন-আমীন!]
বাজলো দামামা সাজলো নকীব
নওজোয়ান
শির উঁচু করি দাঁড়ালো আবার
মুসলমান।
তওফীক দাও আয় বহমান
হাজার সে-হাত
জেহাদের মাঠে জামাতের সাথে
করে মোনাজাত।
দুনিয়ায় ইসলাম
হোক আবাদ,
আমরা মুসলমান
চির আজাদ–
নবীজীর রওশন
নূরে খোদার ?
লা এলাহা ইল্লাল্লাহু
যার হাতিয়ার।
মুজাহিদ মুসলিম
সারা জাহান
জয় করে নেবে জানি
এই ফরমান।
***
[কাতারে-কাতার মুজাহিদ দল এগিয়ে চলেছে। বুকে তাদের দুর্বার জোশ। কণ্ঠে কণ্ঠে পাক-কালামের বাণী-আল্লাহু আকবর—আল্লাহু আকবর।
জেরুজালেমের পথে-প্রান্তরে, জেহাদের ময়দানে সেই দরজি কণ্ঠ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। জেরুজালেম জয়ের জন্য মারমার করে ছুটছে মুজাহিদ ভাইরা।
সিপাহসালার শেষ বারের মতো ঘোষণা করছেন–জেরুজালেম জয় না করা পর্যন্ত কেউ থামবে না। আমাদের আরাম হারাম। জেরুজালেমের কেল্লায় দ্বীন ইসলামের বিজয়-নিশান উড়িয়ে দাও, উড়িয়ে দাও। যতো জলদি পার দ্বীনের নিশান উড়াও। জোর কদমে এগিয়ে যাও, এগিয়ে যাও। ] :
সারি সারি চলে
শহীদী সেনানী
হাতে সব তেগ তলোয়ার,
কণ্ঠে কলেমা
পাক কালামের
বুকে বুকে জোশ দুর্বার।
শুরু হলো তবে
জংগে জেহাদ
দুশমন দলে পয়মাল,
দামাল জোয়ান
দরজি গলায়
হাঁকে সামাল-সামাল।
ইসলামের ওই ঝঙা উড়াও
জেরুজালেমের কেল্লায়,
শত শহীদের দিলীরের খুন
বজ্র বাহুতে চমকায়।
জাগে সে মুমিন ভাইরা সব
দিকে দিকে শুধু খুশীর রব
কণ্ঠে কণ্ঠে তকবীর হাঁকে
নওল নকীব নওজোয়ান–
বিজয়ীর বেশে এগিয়ে চলেছে
বীর মুজাহিদ মুসলমান।
*
[ মহাবীর সালাহউদ্দীন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অমিততেজে মুষ্টিমেয় মুজাহিদ নিয়ে বিরাট বাহিনীর সাথে লড়ছেন।
ক্রমাগত পিছু হটছে দুশমন দুরাচার-হানাদার। আর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত।
হঠাৎ শত্ৰু-শিবিরে সাদা পতাকা পতপত করে উড়লো। সিপাহসালার দিনান্তে দেখলেন সেখানে সন্ধির প্রতীক উড়ছে।
তারপর দূতের মুখে সব সংবাদ শুনলেন। দুশমনরা বিনাশর্তে সন্ধি করতে চায়। স্বয়ং খ্রীস্টান নরপতি সসম্মানে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাঁর যুদ্ধ করার খায়েশ আর নাই। তিনি গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মত্যু শয্যায় শায়িত।
শুনে সিপাহসালার সালাহউদ্দীন স্থির থাকতে পারলেন না। হেকিমের সাজে দরবেশের ছদ্মবেশে পরক্ষণেই হাজির হলেন শত্রু শিবিরে। আপন হাতে তাঁর সেবা করলেন, শুশ্রুষা করলেন। দ্বীন-দুনিয়ার মালিকের দরবারে হাজার শোকর জানালেন ] :-
অবশেষে একদিন–
সন্ধির কথা স্বকর্ণে শুনে
বিস্মিত সালাহউদ্দীন।
নৃপতি রিচার্ড খ্রীষ্টান বীর
হঠাৎ পেয়েছে ভয়,
দুর্গ প্রাকারে রোগ-শয্যায়
তাই নয় আশ্রয়।
শত্রু শিবিরে সালাহ উদ্দীন।
তড়িঘড়ি তবু আসে
বন্ধুর মতো পরম সোহাগে
আশ্বাস দিয়ে হাসে।
দিনের পর যতো দিন
যায় রিচার্ডের সেবা-শুশ্রুষায়
সিপাহসালার সালাহউদ্দীন
দরবশ বেশে নির্ভয়।
দ্বীন ইসলামের দীক্ষা তাহার।
বিফল হবার নয়।
[ দিনের পর দিন ধরে চলতে থাকলো রিচার্ডের চিকিৎসা! সিপাহসালার দিনের পর দিন তাঁর খেদমত আর এলাজ করলেন। গোপনে স্বীয় সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিলেন অসুস্থ-অসহায় দুশমনদের সেবা-যত্ন করতে। নিজের দেশে নিজের মাটিতে মুমূর্ষ শত্রুকে প্রাণে বধ করবেন না। পবিত্র ইসলামের বিধান তা নয়। ইসলাম বলে, দুশমন যদি পরবাসে আসে তাকে আপ্যায়ন করে। আপন আবাসে দুশমনের দেখা পেলে তাকে আপন করে নাও। আর দুশমন যদি বিপদাপন্ন হয়, তা হলে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করে। প্রতিটি মুমিন-মুজাহিদের জন্যে তা মুস্তাহাব।
পুত-পবিত্র ইসলামের এই আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুৎ হবেন না। পাক-কালামের প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করবেন। কারণ তিনি আল্লাহর পিয়ার বান্দা! নূর নবীজির (সঃ) প্রিয় উম্মত।
খৃস্টান নরপতি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সে প্রমাণ পেলেন। আকুল-ব্যাকুল হয়ে মহান দরবেশের পরিচয় জানতে চাইলেন। আনন্দের আতিশয্যে সংগে-সংগে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। হাসিমুখে অভিবাদন জানালেন। বললেন : হে বুজর্গ দরবেশ, আপনাকে কি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারি ? সমস্ত প্রশংসা আপনার প্রাপ্য। বলুন, কি পুরস্কার পেলে আপনি খুশি হবেন।]
সুস্থ হইয়া নৃপতি রিচার্ড
আনন্দে তাই আটখান,
কহিলেন কে গো তাপস-মহান
আমার জীবন করলে দান।
শুনি সেই কথা শত্ৰুর মুখে
সিপাহসালার তবে,
শির উঁচু করে প্রশ্ন করেন
পরিচয় জেনে কি হবে?
***
না-ছোড় রিচার্ড ব্যাকুল হয়েই
তবুও জানতে চাই
জীবন-দাতার নাম-ধাম সব
তুলনা যে তার নাই।
যা আছে আমার সব নিয়ে যাও
কতো না করেছো ক্লেশ
তারি সাথে-সাথে সালাম নাও
ওগো পীর-দরবেশ।
****
[ মহামতি সালাহউদ্দীন বিদায় বেলায় জানালেন, তিনি কিছুই চান না। সম্রাট সুস্থ হয়েছেন এতেই তিনি খুশী। এর চেয়ে বড় পাওনা তাঁর কাম্য নয়। তাঁর কর্তব্য তিনি করেছেন মাত্র।
কিছুক্ষণ পরেই নরপতি রিচার্ড জানতে পারলেন সব। তিনি অন্য কেউ নন স্বয়ং সিপাহসালার সালাহউদ্দীন। যাঁর সেবা-শুশ্রুষায় নিশ্চিত নব-জীবন পেয়েছেন। বিসূচিকায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাঁচার আশা ছিলো না। সেনাবাহিনী ধরেই নিয়েছিলো তিনি মারা যাবেন। তাঁর মৃত্যু ছিলো অবধারিত।
সব জেনে-শুনেই গাজী সালাহউদ্দীন তাঁর কাছে ছুটে এসেছেন। অক্লান্ত নিষ্ঠার সাথে সার তাঁর চিকিৎসা ও পরিচর্যা করেছেন। এমন ত্যাগের নজীর কোথা-ও নেই।
নরপতি রিচার্ড ইসলামের মহান আদর্শের পরিচয় পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন। মহামতি সালাহউদ্দীনের অপূর্ব আত্মত্যাগ তাঁকে অভিভূত করেছে। সসম্ভ্রমে সম্রাট তাঁকে সালাম জানালেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম আর মহান সিপাহসালারের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার কবল কথা দিলেন।]
শান্ত কণ্ঠে শোনলে সেদিন
মহাবীর দুর্জয়–
নৃপতি রিচার্ড এসেছো এখানে
করতে যাহারে জয়।
এতোদিন ধরে সেই দুশমন
হাজির হয়েছে কাছে
এবার খুশীতে বিদায় দিলাম।
আর কি বলার আছে?
কুর্নিশ করে রিচার্ড জানান
আমি যে খাদেম তব
আজকে পেলাম দ্বীনর দীক্ষা
ইসলামে অভিনব।
[ গাজী সালাহউদ্দীন সহাস্যে জবাব দেন—আল্লাহর দরবারে হাজার হাজার শোকর। আল্লাহর মেহেরবানীতে আপনি আরোগ্য লাভ করেছেন। আলহামদুলিলাহ।
তারপরই তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বললেন–আজ থেকে আমরা দুশমন নয় দোস্ত! আমরা কেউ কারো গোলাম নই—আমরা অভিন্ন-হৃদয় আপনজন। আমরা এক আল্লাহর বান্দা, এক আল্লাহরই সৃষ্টি। সেই এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা নই, খাদেম নই।
সম্রাট রিচার্ড সহসা দিব্যদৃষ্টি লাভ করলো। গাজী সালাহ উদ্দীন তাঁর সামনে তুলে ধরলেন ইসলামের সৌন্দর্য্য। রিচার্ড মনে-প্রাণে মুগ্ধ। মুসলিম জাহান তাঁকে মহান প্রেরণা দিয়েছে। ত্যাগের দীক্ষা দিয়েছে দ্বীন-ইসলাম। এই জয়ের গৌরব তিনি সংগে করে নিয়ে যাবেন সাত সাগর তেরো নদীর পারে। সেখানে স্মরণ করবেন পুত-পবিত্র ইসলামের শিক্ষা ও সৌন্দর্যের সওগাত। সত্যি সত্যিই এতোদিনে তিনি মানবতার সনদ লাভ করেছেন। সিপাহসালার সালাহউদ্দীনের সাথে দেখা না হলে তাঁর জীবন ব্যর্থ হতো। সবার উপরে যে সত্য, ইসলামের অপার সৌন্দর্যে তিনি সে সত্যের সন্ধান পেয়েছেন। এবার তিনি ধন্য, পূর্ণ।
মহামতি মহাবীর গাজী সালাহউদ্দীনকে সংগে সংগে সালাম জানালেন সম্রাট রিচার্ড। তাঁর বিপুল সেনাবাহিনী তাঁর সাথে-সাথেই সোচ্চার জয়ধবনি দিয়ে উঠলো। শুধু জেরুজালেমের জয় নয়, সারা জাহানে সেদিন সাগবে মুসলিম জাহানের বিজয় ঘোষিত হলো। ]
সহসা তাকেই বুকে বেঁধে নিয়ে
গাজী সালাহউদ্দীন
সহাস্যে কন বন্ধু আমরা
আজ হতে চিরদিন।
ইসলাম বলে ভাই-ভাই সব
কেহ নয় করে দাস।
সাম্য-মৈত্রী সম অধিকার
ইসলামী ইতিহাস।
***
এক আল্লাহর বান্দা সবাই
একই কাতারে আমাদের ঠাঁই
জামাতে জেহাদে সবখানে তাই
আমরা এক সমান
দ্বীনের শিক্ষা, রসুলের বাণী
এই তার ফরমান।
নত শির হয় নৃপতি রিচার্ড
সোচ্চারে হন নির্ভয়
জেরুজালেমের জয় শুধু নয়
তামাম জাহান করবে জয়।
***
সাবাস হে বীর সিপাহসালার
সব আগে নাও সালাম আমার
সালাম সবার হাজার সালাম।
বাজলো দামামা বজ্রনিনাদ
গাজী সালাহ উদদীন-জিন্দাবাদ
যুগ যুগ ধরে জিন্দা আজাদ
ইসলাম আর পাক কালাম।
সূত্র : জেরুজালেম জয় পিডিএফ বই