
তোমরা যারা “ট্রু লাভ” করো —
“‘সত্যিকারের’ প্রেমে পড়ে গেলে” বা “ব্রেক-আপ হয়ে গেলে কী করবেন” তা নিয়ে বলার আগে আরেকটু ক্যাচাল করে নেই। একবার কলকাতায় এক ইউনিতে পড়া এক হিন্দু ছেলের সাথে আমার অনেক কথা হয়। কথায় কথায় ধর্ম প্রসঙ্গ আসলো। তা সে ইসলামের খুব প্রশংসা করে এক পর্যায়ে বললো, “দাদা, আপনাদের ধর্মটার সব দিক ভাল্লাগে।
শুধু একটা জায়গায় কেমন জানি। কোন গান শুনতে নিষেধ করে দেয়। আচ্ছা, যে গানগুলা ভালো, সে গানগুলা শুনলে সমস্যা কী?” আমি বললাম, “কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ এটা নির্ধারণ কে করবে? আপনার কাছে যা ভালো আমার কাছে তা মন্দ হতে পারে আর ভাইস ভার্সা। আসলে আমার আপনার চেয়ে আমার আপনার জন্য কোনোটা ভালো তার হিসাব আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন বলেই সমাধান তিনি দিয়ে দিয়েছেন। ইসলাম কোন পাপ শুধু নয় পাপের পথগুলোকেও নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।” . আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আমাকে ডাইরেক্ট বলে দিছেন, “যিনার কাছেও যেওনা”। এখানে যিনার কাছে যাওয়া আর যিনা করা দুই বিষয়। ধরেন, আপনার সামনে একটা এরিয়ায় হঠাৎ করেই আগুণ লাইগা গেলো। বিপুল পরিমাণে আগুণ। দাউদাউ করা দাবানল। আপনাকে এসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বললো, “সরে যান”। আপনি বললেন, “সমস্যা কী? আমি তো এখনো আগুনে পুড়িই নাই। আমার সরে যাওয়ার কারণ কী?” ইমোশনাল মনে যেই এপ্রোচগুলো খুব পোক্ত মনে হয় সেগুলো হলো একটা ছেলের মূল উদ্দেশ্য হলো একটা মেয়েকে “পটানো” আর এনিহাউ প্রেমের নামে কার্যসিদ্ধি করা। এটা গেল এক শ্রেণী।
আরেকটা শ্রেণী নিজেদেরকে “ট্রু লাভার” বলে বলে সত্যিকার অর্থেই একটা মেয়েকে বা বিপরীত ক্ষেত্রে একটা ছেলেকে জীবন দিয়ে পেতে চায়। এরা আবার চিন্তা করে আমি তো তার ভালোটাই চাই সবসময়। অথবা, আমি তো তাকে ভালো করে দেখিইনি। আমি তো কোন অশ্লীল চিন্তাও করিনা তাকে নিয়ে। কিংবা আমি তো তাকে শুধু পছন্দই করি। ডেটিং তো করিনা। এই শ্রেণীর কাছেই আবার গালভরা বুলি বা গালি শোনা যায়- “প্রেম করবি পিউর, ছ্যাকা খাবি শিউর” ইত্যাদি। একটু, ভাই! “আপাত যথার্থ” এই সবগুলো এপ্রোচই কাঁচা এবং আল্টিমেটলি ক্ষতিকর। . এবার মূল পয়েন্টে আসি। ইসলামে প্রেম ডাইরেক্ট হারাম। এর ফাঁকফোকর আপনি খুঁজতে গেলেন মানে আসলে শয়তান আপনাকে ধোঁকায় ফেলতেছে যা আপনি বুঝতেছেন না। প্রেম কেন হারাম তা প্রথমত, “যিনার কাছেও যেওনা” থেকেই প্রমাণিত। একই যুক্তিতে সমস্ত প্রকার অশ্লীলতা হারাম।
এছাড়াও চোখের যিনা আছে, কানের যিনা আছে, অন্তরের যিনা আছে, লজ্জাস্থানের যিনা আছে। আর যদি আপনি নিজেকে মুফতি বানিয়ে নিজের প্রেমকে ব্যাপ্টাইজকরন অর্থাৎ পবিত্রকরণের ধান্দায় থাকেন, তবে আপনি পরিণতি হালে না বুঝলেও বুঝবেন পরে। . আপনি তো “পিউর প্রেম” করেই ফেলছেন। “আমি এখন কী করবো?” শিরোনামে সারা যাকেরের কাছে কিংবা মেহতাব খানমের কাছে লেখার আগে কিংবা লাভগরুদের টিপস শোনার আগে মূল কথাটা শুনে নিন। কীভাবে আপনি ঠিক হবেন? কীভাবে আপনি সুখী থাকবেন? মনস্থির করতে পারবেন? ভালো জীবনসঙ্গী পাবেন জীবনে সুখী হতে? . এক কথায় সম্পূর্ণ ভুলে যান। সামান্যতম আশা আকাংখ্যা থাকলেও।
আপনার রিলেশনশিপ যদি আল্লাহর পথে না হয়, তবে সারাজীবন যিনার গুনাহ কামাই করতে হবে। যিনা কিন্তু হত্যার পরেই গুরুতরো পাপ আল্লাহর কাছে। তাই সবার আগে তাওবাহ করুন। তার মধ্যে ভালো কিছু থাকুক কিংবা না থাকুক। সম্পূর্ণ ফিরে আসুন। আপনি যে তাকে “ছাড়া বাঁচবেন না” শ্লোগান দিচ্ছেন, হ্যাঁ এগুলো আপনার মন থেকেই আসছে। আর আসছে তা শয়তানের প্ররোচনায়। আপনি তাকে ছাড়াই বাঁচবেন। কারণ আপনার জীবনসঙ্গী কে হবে তা আল্লাহই নির্ধারণ করে রেখেছেন আপনার জন্মেরও বহু আগে। তাকদীরে বিশ্বাস করা হলো ঈমানের একটা ভাইটাল পার্ট। আর ভরসা কেবল রাব্বুল ‘আলামীনের কাছেই করতে হবে। সুখের মালিক আল্লাহর কাছে সুখ চাইতে হবে। এই পথ ছাড়া বাকী পথগুলা সাময়িক সমাধানের। চুড়ান্ত না।
যদি তাকে বিয়েও করেন তবে আপনার আগের “পবিত্র ভালোবাসা”র জন্য তাওবাহ করুন। কারণ গোটা দুনিয়া ঐটারে “পবিত্র” বললেও আল্লাহর কাছে তা পবিত্র ছিলো না কখনো। সবাইকে জানিয়ে তিনবার কবুলের আগে কেউ কারও “জান, টিয়া, ময়না, জানু, পাখি, বেবি, ডার্লিং, বাবু” ইত্যাদি হতে পারে না। যদি তা ভেবে থাকেন তবে তা অবৈধভাবে। . আর মেয়ে পটানোর জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়ায় পাঠায় নাই। ইবাদাতের জন্য পাঠাইছেন। সময়, সুযোগ আর সামর্থ্য থাকলে বিয়ের কথা বলেছেন। এটাও ইবাদাত হিসেবেই গণ্য। বিয়ে দ্বীনের অর্ধেক। আর বিয়া ছাড়া প্রেম বেদ্বীনের সবকিছু।
মেয়ে পটানোর ধান্দা আসে লো সেলফ এস্টিম থেকে। মানে হীন-আত্মমর্যাদা থেকে। পরে পস্তানো ছাড়া আর কিছুই থাকে না। . আরেকটা কথা। “ফরগিভ এন্ড রিমেম্বার” অপশনে না ক্লিক করে “ফরগিভেন এন্ড ফরগটেন” অপশনে ক্লিক করেন। তাইলে কী হইবো জানেন? আল্লাহ আপনাকেও মাফ কইরা দিবো। মানুষের কুৎসা রটানোও বাদ দিয়া দেন। তার বিরুদ্ধে সাফল্য দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার ধান্দাও বাদ দেন। যা ছিল আপনার গুনাহ তা আল্লাহ wipe out করে দিক এটাই চান মনে প্রাণে। নয়ত নিজের মুখেই ছাই পড়বে। আপনি সফল হোন নিজের জন্য। অন্যকে দেখানোর জন্য না। বন্ধুদেরকেও খুব বেশি বলার দরকার নাই। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার দুর্দিনে কিছু বন্ধু এসব আজাইরা গুনাহের স্মৃতি স্মরণ করাই দিয়া মজা নিবে। আপনার পারিবারিক ক্ষেত্রেও সমস্যা হইতে পারে। ক্ষমা চান আল্লাহর কাছে। শেষ রাতে তাহাজ্জুদে। আল্লাহই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।”
SOURCE: Facebook.