কুরআনে আল্লাহ্‌র পরিচয়

রচনায়ঃ মুখতার বিন আব্দুল গণী

আল্লাহ সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। তিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু। তিনি বিচার দিবসের মালিক (ফাতিহা ১-৩)। তিনি আল্লাহ এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (ইখলাছ ১-৪)

আল্লাহ মানুষের পালনকর্তা। মানুষের অধিপতি। মানুষের মা’বূদ (নাস ১-৩)। তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন এবং তিনি সুপরিমিত করেছেন এবং পথ প্রদর্শন করেছেন। তিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেছেন। অতঃপর করেছেন তাকে কালো আবর্জনা । তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয় (আ’লা ২-৭)। তিনি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন (ত্বীন ৪)। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। তিনি পরম দয়ালু। তিনি কলমের সাহায্যে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না। (আলাক্ব ১-৫)

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন। তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা দাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তা’আলা স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়’ (হাশর ২২-২৪)

তিনিই আল্লাহ তা’আলা। তিনি একই উপাস্য, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই; তিনি কৃপানিধান, পরম দয়ালু’ (বাক্বারাহ ১৬৩) ।

তিনি আল্লাহ তা’আলা। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই; তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া। সৃষ্টির সামনে বা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলিকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (বাক্বারাহ ২৫৫)।

আল্লাহ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহ্‌র সামনে রয়েছে সবকিছু। তিনি প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন। তিনিই ক্ষমাশীল, প্রেমময়। মহান আরশের অধিকারী। তিনি যা চান তাই করেন (বুরূজ ৯, ১৩-১৬)।

আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। ফেরেস্তাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ্‌ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম (ইমরান ১৮-১৯)।

আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল্লাহ্‌র নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই। তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে, যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (ইমরান ২,৪-৬)।

তিনিই আল্লাহ সার্বভৌম শক্তির মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন যার যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করেন। তাঁরই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। বলে দিন, তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সে সবও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (আলে ইমরান ২৬ ও ২৯)।

পরম করুণাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফায়ছালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হয়। তিনি হ’লেন যাঁর রয়েছে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। রাজত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই; তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাঁকে শোধিত করেছেন পরিমিতভাবে’( ফুরক্বান ১-২)।

পরম করুণাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা। সূর্য ও চন্দ্র হিসাব মত চলে এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সিজদারত আছে। তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড। যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদণ্ডে। তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্যে। এতে আছে ফলমূল এবং বহিরাবরণ বিশিষ্ট খর্জুর বৃক্ষ। আরও আছে খোসাবিশিষ্ট শস্য ও সুগন্ধি ফল। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুল্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে’ (আর-রহমান ১-৮, ১০-১২, ১৪-১৫)।

‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে,  দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সুর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁর কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক (আ’রাফ ৫৪)। বলে দাও, হে মানবমণ্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল। সমগ্র আসমান ও যমীনে তাঁর রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর, তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরলপথ প্রাপ্ত হ’তে পার (আ’রাফ ১৫৮)

নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পারবে না তাঁর অনুমতি ছাড়া। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না? তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহ’র ওয়া’দা সত্য, তিনি সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করেন তাদেরকে বদলা দেওয়ার জন্য। যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনছাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব এজন্যে যে, তারা কুফরী করছিল। তিনিই সে মহান সত্ত্বা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল। আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে। অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযীলসহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলির সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেন নি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে। নিশ্চয়ই রাত দিনের পরিবর্তনের মাঝে এবং যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীনে, সবই হ’ল নিদর্শন সেসব লোকের জন্য যারা ভয় করে’ (ইউনুস ৩-৬)

তিনিই আল্লাহ, যিনি উর্ধ্ব দেশে স্থাপন করেছেন আকাশ মণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলি দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেক নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শন সমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। তিনিই ভূমণ্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে  রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা করে’ (রা’দ ২-৩)।

তিনি আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে সবকিছুর মালিক। কাফেরদের জন্য বিপদ রয়েছে, রয়েছে কঠোর আযাব (ইবরাহীম ২)। তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্য ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের জন্য আজ্ঞাবহ করেছেন। যাতে তার আদেশে সমুদ্রে চলাফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন। যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নিয়ামত বর্ণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ’ (ইবরাহীম ৩২-৩৪)।

আল্লাহ ভূ-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছেন এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছেন। তিনি তোমাদের জন্য তাতে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য যাদের অন্নদাতা তোমরা নও। তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার রয়েছে। তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণেই তা অবতারণ করেন। তিনি বৃষ্টিগর্ভ, বায়ু পরিচালনা করেন।অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, এরপর তোমাদেরকে তা পান করান। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভাণ্ডার নেই। তিনিই জীবন দান করেন, মৃত্যুদান করেন এবং তিনিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী’ (হিজর ১৯-২৩)

তিনিই আল্লাহ, যিনি ভূ-মণ্ডল ও সমুচ্চ নভোমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন। তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন। নভোমণ্ডলে, ভূমণ্ডলে, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং সিক্ত ভূ-গর্ভে যা কিছু আছে, তা তাঁরই। যদি তুমি উচ্চকণ্ঠেও কথা বল, তিনি তো গুপ্ত ও তদাপেক্ষাও গুপ্ত বিষয়বস্তু জানেন। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য বা ইলাহ্‌ নেই। সব সৌন্দর্যমণ্ডিত নাম তাঁরই’ (ত্বা-হা ৪-৮)

শীর্য মহিমাময় আল্লাহ, তিনিই সত্যিকার মালিক। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক’ (মুমিনুন ১১৬)। আপনি সেই চিরঞ্জীবের উপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই এবং তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করুন। তিনি বান্দার গোনাহ সম্পর্কে সথেষ্ট খবরদার। তিনি নভোমণ্ডোল, ভূ-মণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়’ (ফুরক্বান ৫৮-৫৯)।

বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত। হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (নামল ৮-৯)। আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে ঊর্ধ্বে। তাদের অন্তরে যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, আপনার পালনকর্তা তা জানেন। তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁর ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে (কাছাছ ৬৮-৭০)। তিনিই আল্লাহ, তিনি দুর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন। অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন। অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতার ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান’ (রূম ৫৪)।

তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল, ভূ-মণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না? তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাযার বছরের সমান। তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যে জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু (সিজদাহ ৪-৬)।

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র, যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তাবাহক। তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা যোগ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সক্ষম। আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না তিনি ব্যতীত। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। হে মানুষ, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ অনুসরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই (ফাত্বির ১-৩)। নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন, যাতে টলে না যায়। যদি এগুলি টলে যায় তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলিকে স্থির রাখবেন? তিনি সহনশীল, ক্ষমাশীল’ (ফাত্বির ৪১)।

মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডাকারী। সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভুত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলি পচে গলে যাবে? বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলিকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি জীবিত করবেন। তিনি  সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত। যিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও। যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই হয়ে যায়। অতএব, পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সব কিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে (ইয়াসীন ৭৭-৮৩)।

নিশ্চয়ই তোমাদের উপাস্য এক। তিনি আসমান সমূহ, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা এবং পালনকর্তা উদ্যাচলসমূহের (ছাফ্‌ফাত ৪-৫)। তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল (যুমার ৫)।

তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টি করেছেন। তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জিন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ (যুমার ৬)। আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আসমান ও যমীনের চাবি তাঁরই নিকট। তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেননি। ক্বিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে’ (যুমার ৬২-৬৩, ৬৭)

তিনিই আল্লাহ তা’আলা । তিনি আরশে সমুন্নত আছেন। তিনি মহানএবং সুমহান। তিনি যা চান তাই করেন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক। যার হুকুমে বিশ্ব-ব্রক্ষ্মাণ্ড পরিচালিত তিনিই আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ তা’আলা।

Source: পুরনো মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকা থেকে সংগৃহীত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button